Central Allowance Due

উত্তরে একশো দিনের কাজে বকেয়া ২৭৪ কোটি টাকা

থমকে আবাস যোজনা। টাকা বন্ধ একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও। বার বার কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শনের পরেও কাটছে না অচলাবস্থা। কেন্দ্র-রাজ্য দায় ঠেলাঠেলি চলছে।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৩২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ একশো দিনের কাজ করেও টাকা পাননি বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, সেই টাকার পরিমাণ প্রায় ১৪২ কোটি। শ্রমিকদের টাকা ও বিভিন্ন মালপত্রের খরচ মিলিয়ে জেলায় প্রায় ২৭৪ কোটি টাকা বকেয়া আছে বলে দাবি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ। সমস্যায় পড়েছেন বহু শ্রমিক। এরই মধ্যে দফায় দফায় ঘুরে গিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ফের রাজ্যে এসেছে তারা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্র অর্থ মঞ্জুর করে কি না, সে দিকে তাকিয়ে অনেকেই।

Advertisement

হাসনাবাদ ব্লকে ৮,২৭৬ জন মানুষ জব কার্ডের কাজ করেও টাকা পাননি। শুধু এই ব্লকেই একশো দিনের কাজে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই ব্লকের বরুণহাট রামেশ্বরপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তৈয়ব মোল্লা জানান, একশো দিনের কাজ করে টাকা পাননি। কয়েক মাস আগে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন রাজমিস্ত্রির কাজকরতে। সপ্তাহখানেক হল বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে থেকে কাজ করতে চাই। কিন্তু গ্রামে কাজ নেই। একশো দিনের কাজও বন্ধ।’’

সন্দেশখালি ২ ব্লকের কোরাকাটি পঞ্চায়েতের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ জব কার্ডের কাজ করেও টাকা পাননি। তাঁদের বকেয়া প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে এই পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের কাজে প্রায় ২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের প্রায় ২৮০০ মানুষ কাজ করেও টাকা পাননি। সব মিলিয়ে বাকি প্রায় ৩ কোটি টাকা। মণিপুর পঞ্চায়েতের প্রায় ৬ হাজার মানুষ টাকা পাননি। শ্রমিকদের বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি। এই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা চঞ্চল দাস কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছেন। দিনে ৫০০ টাকা উপার্জন করেন। চঞ্চল বলেন, ‘‘বাড়িতে ছোট বাচ্চা, স্ত্রী আছেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের ছেড়ে এসেছি। একশো দিনের কাজ চালু থাকলে এখানে আসতে হত না। কাজ করে টাকাটাও পেলাম না!’’

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের স্যান্ডেলবিল পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ জব কার্ডের টাকা পাননি। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা বকেয়া। দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকায় হাজার পনেরো মানুষ কাজ করে টাকা পাননি। বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি। প্রায় একই পরিস্থিতি কালীতলা ও হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতেও। এই দুই এলাকায় বকেয়ার পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। মিনাখাঁ ব্লকে ৬ কোটি, স্বরূপনগর ব্লকে ৭ কোটি, বাদুড়িয়া ব্লকে বকেয়া ৭ কোটি, হাড়োয়া ব্লকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা বকেয়া বলে প্রশাসন সূত্রের জানা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার বাংলার মানুষকে প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত করছে। দীর্ঘ দিন ধরে জেলার বহু শ্রমিকের টাকা আটকে রেখেছে। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়ছি।’’

বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষের যুক্তি, ‘‘কেন্দ্র একশো দিনের কাজের টাকা দিতেই চায়। কিন্তু তৃণমূল বাংলার শ্রমিকের নাম করে একশো দিনের টাকা আত্মসাৎ করার ফন্দি এঁটেছে। কেন্দ্র সেটা ধরে ফেলেছে। তাই প্রয়োজনীয় হিসেব, তথ্য-প্রমাণ চাইছে। সে সব পেশ করুক রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সন্তুষ্ট হলে নিশ্চয়ই টাকা দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন