flood

Flood: ফের ভাঙল বাঁধ, জলমগ্ন এলাকা

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফি বছর বর্ষার সময়ে একই ছবি ফিরে আসে। ফাটল ধরে বাঁধে, জলের চাপে বাঁধ ভেঙে বানভাসি হয় গ্রামের পর গ্রাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২২ ০৮:২৮
Share:

বিপত্তি: বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে এলাকায়। সাগরের বঙ্কিমনগরে। নিজস্ব চিত্র

আশঙ্কা থাকলেও ঝড় আসেনি। তবে বাঁধের ভাঙন রোখা গেল না।

Advertisement

জল ঢুকেছে বেশ কিছু এলাকায়। ক্ষতি হয়েছে জমি, বাড়ির। নিম্নচাপ ও কটালের সাঁড়াশি চাপে মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন উপকূল এলাকায়। বুধবারও দিনভর হালকা বৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে, পূর্ণিমার কটালের ফলে নদীতে জলও বেড়েছে। এর জেরে বুধবার রাত থেকে কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার একাধিক জায়গায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয়, কোথাও নামে ধস। অনেক জায়গায় আবার বাঁধ উপচে নোনা জল ঢোকে এলাকায়। বুধবার রাতে জোয়ারের ফলেও কয়েক জায়গায় বাঁধ ভাঙে। বিশেষ করে, সাগরের বঙ্কিমনগরের বটতলা নদীর প্রায় ২০০ ফুট বাঁধের একাধিক জায়গা ভেঙে জল ঢোকে। এলাকার একটি রিংবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছিল। সেই বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল ঢুকেছে বঙ্কিমনগর ১ নম্বর কলোনি এলাকায়। প্রায় কুড়িটি বাড়ি জলমগ্ন। পুকুর ও চাষের জমিতেও জল ঢুকেছে।

সুমতিনগর, বোটখালি, মহিষামারি এবং নামখানার ঈশ্বরীপুর এলাকাতেও বাঁধের ফাটল দিয়ে এলাকায় জল ঢুকেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দ্রুততার সঙ্গে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করে সেচ দফতর। উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, পূর্ণিমার কটালের জেরে নদী ও সমুদ্রের জল বাড়ছে। সঙ্গে রয়েছে পুবালি হাওয়ার জের। এ দিকে, একাধিক বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে আরও বাঁধ ভেঙে এলাকা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কায় রাত জাগছেন মানুষ।

Advertisement

কিছুদিন আগেই গুরু পূর্ণিমার কটালে সাগরের বঙ্কিমনগর এলাকায় নদীবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। পরে সেচ দফতর দ্রুত বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করে। বাঁধের কাজও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই বাঁধ দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় কিছুটা অংশ ভেঙে ফের এলাকায় জল ঢোকে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফি বছর বর্ষার সময়ে একই ছবি ফিরে আসে। ফাটল ধরে বাঁধে, জলের চাপে বাঁধ ভেঙে বানভাসি হয় গ্রামের পর গ্রাম। প্রশাসনের তরফে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে বার বার বাঁধ মেরামতি করলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তাঁদের দাবি, ক্রংক্রিটের বাঁধ না হলে সমস্যা মিটবে না। সাগর ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, বঙ্কিমনগর এলাকায় ২ কিলোমিটার কংক্রিটের পাকা বাঁধ ছিল। আমপানে ওই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু জায়গায় ফাটল দেখা দেয়, অনেক জায়গায় বাঁধ দুর্বল। মেরামতি করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। কটালে বাঁধ ভাঙছে। আগামী তিনদিন কটালের জেরে জলস্তর বাড়বে। ফলে দুর্বল বাঁধগুলিতে ফাটলের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাগর ব্লক প্রশাসন ও সেচ দফতর দুর্বল বাঁধগুলির উপরে নজর রাখছে। গত দিন ধরে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। বৃষ্টিতে নিচু এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আমন ধানের চাষ প্রায় শেষের দিকে। চাষ হয়ে যাওয়া জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। রোপন করা ধান গাছ দেখা যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি জল না নামলে চাষে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।

কাকদ্বীপ মহকুমায় প্রতিটি ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা আছে। পরিস্থিতির উপরে প্রশাসন নজর রাখছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নামার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। স্থানীয় বাসিন্দা সোমা মাইতি বলেন, ‘‘প্রতি কটালে এলাকায় জল ঢোকে। পর পর তিন বছর ধরে এই পরিস্থিতি হচ্ছে। আমরা চাই স্থায়ী কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হোক।’’

কাকদ্বীপ মহকুমার সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণকুমার দে বলেন, ‘‘বঙ্কিমনগর এলাকায় কিছুটা অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখান থেকে জল ঢুকেছে। গত গুরুপূর্ণিমার কটালের পরে বেহাল বাঁধ দ্রুত মেরামত করা হয়। তারপরেও জলস্তর বাড়ার ফলে এই বিপত্তি দেখা দিয়েছে। যে অংশে ভেঙেছে, সেই অংশে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।’’

সাগরের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল জানান, বুধবার রাতে বঙ্কিমনগর এলাকায় নদীবাঁধ উপচে জল ঢোকে। কিছুটা বাঁধ বেহাল হয়ে পড়ে। সেচ দফতর খবর পেয়ে বাঁধ মেরামত শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন