দেশি জলে বাড়ছে বিভুঁইয়ের নোনা মাছ। আর কিছু দিনের মধ্যেই মাছ-ভাতে বাঙালিদের পাতে পড়তে চলেছে এই মাছ।
হেনরি আইল্যান্ডের নোনা জলের পুকুরে ফিলিপিন্সের সামুদ্রিক প্রজাতির ‘কোবিয়া’ মাছের চারা প্রথম তিন মাস পুকুরে চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন গবেষকেরা। স্থানীয় ভাবে নাম দেওয়া হয়েছে ‘গাঙশোল’। চাষ হচ্ছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের পুকুরে। নিগমের কর্তারা জানিয়েছেন, ফিলিপিন্সের উপকূলেই এই মাছ বেশি মেলে। রাজ্যে বাণিজ্যিক ভাবে প্রথমবার এটি পুকুরে চাষ করা হচ্ছে। তবে কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় নোনা জলজীব পালন ও অনুসন্ধান কেন্দ্রের (সিবা) চেন্নাইয়ে নোনা পুকুরে গাঙশোলের চারা উৎপাদন করেছিল। পরের ধাপ হিসেবে দক্ষিণের কয়েকটি রাজ্যের পুকুরে এই মাছের চাষ হচ্ছে। তবে এ রাজ্যে এই প্রথম। বছর খানেকের মধ্যেই বেড়ে ওঠে এই মাছ। পাঁচ থেকে আট কেজি ওজন হয় গাঙশোলের। তবে নোনা পুকুরে অতটা বাড়বে কিনা, তা নিয়ে এখনও কিছুটা সংশয়ে গবেষকেরা।
হেনরি আইল্যান্ডের প্রকল্পে প্রায় ৪ বিঘে পুকুরে ছাড়া হয়েছে ৭৫০টি কোবিয়ার চারা। যা পাওয়া গিয়েছে কেন্দ্রীয় সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র থেকে। তিন মাস পরে এই মাছগুলির ওজন হয়েছে ৫০০-৭০০ গ্রাম। প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘প্রথম তিন মাসে প্রকল্প অনেকটাই সফল বলে মনে হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হলে বলা যাবে কতটা বাড়ছে মাছগুলি। দেশে প্রথমবার নোনা পুকুরের পরিবেশে থাকছে ওরা। তাই ওদের বেড়ে ওঠার প্রতিটি স্তর খুব কাছে থেকে নজরে রাখা হচ্ছে।’’ গবেষকরা জানিয়েছেন, গাঙশোলের বেড়ে উঠতে জলে লবণের দ্রবণ ২৭ পিপিটির কাছাকাছি থাকতে হয়। আর জলে স্রোত থাকতে হয় সমুদ্রের মতোই। তাই পুকুরের জলে কৃত্রিম ভাবে স্রোত তৈরি করার জন্য প্যাডেল হুইলের প্রয়োগ করা হচ্ছে হেনরি আইল্যান্ডে। অনেক সময়ে কৃত্রিম পরিবেশে মাছের বৃদ্ধির জন্য গায়ে হরমোন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করতে হবে না জানান প্রকল্পের আধিকারিকেরা।
আপাতত কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বলে দেওয়া অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সংস্থা থেকে মাছের খাবার আনা হচ্ছে বাংলার নতুন অতিথিদের জন্য। ১০০ টাকা কিলো দরের সেই খাবার খেয়েই আড়ে-বহরে বাড়ছে গাঙশোলের মেগা পরিবার। নতুন মাছের বিপণন কী ভাবে হবে, তা অবশ্য এখনও ঠিক করেনি মৎস্য উন্নয়ন নিগম। গভীর সমুদ্রের বিশাল সাইজের কোবিয়ার ‘বাংলা সংস্করণ’ কবে উঠবে বাঙালির পাতে, সেটাই দেখার।