কাচের লেন্সের কদর কমছে, সমস্যায় জয়নগর

স্থানীয় বহু মানুষের রুজি-রোজগারের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই শিল্প। 

Advertisement

সমীরণ দাস

জয়নগর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩১
Share:

অনিশ্চিত: আর কত দিন চলবে এই কাজ? ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

একটা সময়ে এলাকায় ঘরে ঘরে চশমার লেন্স তৈরির কাজ হত। কাচের লেন্স তৈরির প্রচুর কারখানা ছিল এলাকায়। স্থানীয় বহু মানুষের রুজি-রোজগারের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই শিল্প।

Advertisement

কিন্তু চশমা শিল্পে ইদানীং ভাটা চলছে জয়নগরে। নতুন প্রজন্ম আর এই কাজে আসছে না বলে জানালেন প্রবীণেরা। তা ছাড়া, কাচের লেন্সের বদলে এখন ফাইবারের ব্যবহারই বেশি। যে দু’তিনটি কারখানা কোনও রকমে টিঁকে আছে, সেগুলিও কার্যত বন্ধ হওয়ার মুখে, এমনটাই জানালেন ব্যবসায়ীরা।

পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ বারাসতের বিস্তীর্ণ এলাকায় কাচের বাই-ফোকাল লেন্স তৈরির কাজ হয়ে আসছে। মূলত কাচ পালিশ এবং তাতে পাওয়ার সেটিংয়ের কাজই এখানে হয়। তারপরে সেই লেন্স যায় কলকাতায়। ক্যানিং স্ট্রিট, বৌবাজার, লালবাজার-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাচ যায় এখান থেকেই।

Advertisement

এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বক্তব্য, ইদানীং কাচের লেন্সের চাহিদা অনেকটাই কমেছে। ন্যায্য দামও পাওয়া যায় না। চল্লিশ বছর ধরে এই কাজ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা বিমল দাস। তিনি বলেন, ‘‘সারা দিনে ১২০টি কাচ তৈরি করলে ২০০ টাকা পাওয়া যায়। তা দিয়ে কি সংসার চলে?’’ পালিশ করা এবং পাওয়ার সেটিংয়ের মেশিনকে স্থানীয় ভাষায় ‘হ্যান্ডেল’ বলা হয়। বিমল দাসের আক্ষেপ, আগে তাঁর কারখানায় ১২টি হ্যান্ডেলে কাজ হত। এখন বড়জোর দু’টি হ্যান্ডেল চলে। ইদানীং সকলেই ফাইবার লেন্স ব্যবহার করছেন। যা কাচের তুলনায় অনেক হাল্কা। নাকের ডগায় ঝুলিয়ে রাখা সুবিধার। কাচের লেন্সের চাহিদা কমছে। কারখানা যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ফাইবার লেন্স বানানোর কাজটা এখানে করা গেল না কেন?

দীর্ঘ দিন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত অজয় সাহা বলেন, ‘‘ফাইবার লেন্সের জন্য যে পরিকাঠামো লাগে, তা আমাদের নেই। আর্থিক কারণে সেটা তৈরি করাও সম্ভব নয়। কাচের লেন্স আর ফাইবার লেন্সের প্রযুক্তি তো একেবারেই আলাদা।’’

জেলা শিল্প দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোট শিল্পকে বাঁচাতে জেলা জুড়ে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্লাস্টার তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ বারাসতের ওই এলাকার কথা অবশ্য আমার জানা নেই। খোঁজ নেব।’’

তিনি জানান, ওই কাজের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁরা সমবায় করে আবেদন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনিও বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন