পরিদর্শন: কাজ দেখতে এলেন সরকারি কর্তারা। ছবি: নির্মল বসু
সুন্দরবনে দু’টি সেতু তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হল।
দু’টি সেতুর একটি হবে সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগর ও ন্যাজাটের মধ্যে বেতনী নদীর উপরে। অন্যটি হিঙ্গলগঞ্জের নেবুখালি এবং দুলদুলির মধ্যে সাহেবখালি নদীর উপরে।
সেই কাজ খতিয়ে দেখতেই বৃহস্পতিবার হিঙ্গলগঞ্জের নেবুখালিতে এসেছিলেন পূর্ত দফতরের আধিকারিক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ত ও সড়ক দফতরের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস রায়, চিফ ইঞ্জিনিয়র (সাউথ জোন) সৌমিত্র সেন, বসিরহাটের নির্বাহী বাস্তুকার রানা তারন। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা এলাকায় ঘুরে দেখেন। আগামী এক মাসের মধ্যে জমি জরিপ এবং মাটি পরীক্ষার পরে প্রোজেক্ট রিপোর্ট দেওয়ার কথা নবান্নে। রানা বলেন, ‘‘হিঙ্গলগঞ্জের নেবুখালি এবং দুলদুলির মধ্যে সাহেবখালি নদীর উপরে সেতু তৈরির জন্য আধিকারিকেরা সব কিছু খতিয়ে দেখলেন। শুক্রবার থেকে সেখানে সেতুর জন্য জমি জরিপ সহ অন্য প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
হাসনাবাদ এবং পার হাসনাবাদের মধ্যে কাঠাখালি নদীর উপরে সেতুর দু’পাশে রাস্তার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নদীর মধ্যে তিনটি পিলারের কাজও অনেকটা হয়ে গিয়েছে। হাসনাবাদে সেতুর পর হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি নদীর উপরে দ্বিতীয় সেতুটি হলে যেমন রাজ্যের মানুষ এক গাড়িতে সরাসরি সুন্দরবন পৌঁছতে পারবেন, তেমনই ন্যাজাটে বেতনি নদীর উপরে প্রায় এক কিলোমিটার সেতুটি হলে ভবানীপুর, কালীনগর, সেহেরা, রাধানগর-সহ সেখানকার বেশ কিছু গ্রামের মানুষ সরাসরি এক গাড়িতে করে কলকাতায় যেতে পারবেন। এতে বিশেষ করে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দ্রুত শহরের বাজারে পৌঁছে দিতে পারায় ন্যায্য দাম পাবেন। ফলে দু’টি সেতুর প্রাথমিক কাজ শুরুর খবরে খুশি প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন।
সন্দেশখালি ১ বিডিও অচিন্ত্য মণ্ডল জানান, প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেতনি নদীর উপরে সেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেতুর জন্য জমি নিয়ে কালীনগরের দিককার বাসিন্দাদের কোনও অসুবিধা না থাকলেও ন্যাজাটের দিকের কয়েকটি পরিবারের পক্ষে আপত্তি তোলা হয়েছিল। স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, এডিএম এবং পূর্ত ও সড়ক দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় তা মিটেছে। ফলে সেতুর কাজে কোনও সমস্যা থাকল না।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা ইতিমধ্যেই বিধানসভায় দুই ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় ৫টি সেতুর কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। সাহেবখালি নদীর উপরে সেতু করতে বাম বহুবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।’’
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাম আমলে সন্দেশখালি ১ ব্লকের বেতনি নদী এবং হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সাহেবখালি নদীর উপরে সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবার শিলান্যাস করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তা দেখে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ শিলান্যাসের ফলক তুলে নদীর জলে ভাসিয়ে দেন। সেতুর পরিবর্তে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সাহেবখালি নদীর উপরে ভেসেলে পারাপারের ব্যবস্থা করেছিল বাম সরকার। তাতেও সুন্দরবন এলাকার মানুষের কোন সুবিধা হয়নি। বরং দু’এক দিন চলার পরে ভেসেল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।