প্রতীকী ছবি
করোনা-পরিস্থিতিতে বহু চিকিৎসক চেম্বারে বসা বন্ধ করার ফলে সমস্যায় পড়েছেন অসংখ্য রোগী। বেশির ভাগ চিকিৎসকই প্রাইভেট চেম্বারে সঙ্কটজনক ছাড়া অন্য রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। ফোন পেলে তবেই চেম্বারে বসছেন তাঁরা। তবে ফোনে অবশ্য রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
বনগাঁ শহরের চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক আশিসকান্তি হীরা জানান, তিনি চেম্বারে রোগী দেখছেন। কিন্তু রোগীদের বলে দেওয়া হচ্ছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া আসবেন না। ফোন করে না এলে চিকিৎসককে চেম্বারে পাওয়া যাচ্ছে না। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মহিতোষ মণ্ডল বলেন, “প্রসূতিদের রুটিন চেকআপে আসতে নিষেধ করেছি। তবে সঙ্কটজনক অবস্থা হলে অবশ্যই দেখব।” চেম্বার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক চিকিৎসক। চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার বলেন, “প্রাইভেট চেম্বার করতে গিয়ে কোনও রোগীর থেকে আমরা বা অন্য রোগী আক্রান্ত হন, সেই জন্যই এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালিতে মূলত ওষুধের দোকানেই রোগী দেখেন চিকিৎসকেরা। গত শনিবার থেকে অধিকাংশ চিকিৎসক রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। তার ফলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মামুলি সর্দি-কাশিরও চিকিৎসা হচ্ছে না। ফোন করা হলে চিকিৎসকেরা সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও লকডাউনের জেরে বন্ধ অধিকাংশ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার। বিভিন্ন জায়গায় ওষুধের দোকান বা পলিক্লিনিকগুলিতে নিয়মিত রোগী দেখা চিকিৎসকেরাও আপাতত বসছেন না। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়ছেন রোগীরা।
ডায়মন্ড হারবারের ব্যক্তিগত চেম্বার, ওষুধের দোকান, পলিক্লিনিক মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়মিত বসেন। এখন অধিকাংশই বন্ধ। কেন বন্ধ চেম্বার? চিকিৎসকদের একাংশ জানান, করোনা-সংক্রমণ রুখতে ভিড় এড়ানো জরুরি। চেম্বার খুললে রোগী ও তাঁর সঙ্গে আত্মীয়-পরিজন মিলিয়ে বেশ ভিড় হয়। তা ছাড়া, কোনও রোগী বিদেশ বা ভিনরাজ্যে ছিলেন কিনা তা-ও শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত চেম্বার বন্ধ রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, তাঁদের অধিকাংশের কাছেই পিপিই বা প্রাইভেট প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট নেই। ওই কিটসের মধ্যে মাস্ক, অ্যাপ্রন, টুপি, গ্লাভস ও জুতোর কভার থাকে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংক্রমণ মোকাবিলায় এই কিট খুবই জরুরি। কিন্তু বাজারে এই কিট পাওয়া যাচ্ছে না। এন-৯৫ মাস্কও বাজারে নেই। কিট ছাড়া রোগী দেখতে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। তাই বন্ধ রেখেছেন চেম্বার।
কলকাতা থেকে বহু চিকিৎসক জেলার বিভিন্ন জায়গায় এসে চিকিৎসা করেন। বাসে-ট্রেনেই আসেন তাঁদের অনেকেই। লকডাউনের জেরে গাড়ি বন্ধ থাকায় তাঁরা আসতে পারছেন না। এর ফলেও চেম্বার বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ ক্যানিংয়েও। তবে কিছু জায়গায় গ্রামীণ চিকিৎসকদের চেম্বার খোলা রয়েছে। সাধারণ জ্বর, পেট খারাপের মতো সমস্যাগুলির সেখানে চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু অন্য রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালই এখন এলাকার মানুষের প্রধান ভরসা। করোনা আতঙ্কের জেরে আবার অনেকেই সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে অনেক চিকিৎসকই মোবাইল ফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের। ভিডিয়োকলের মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন কেউ কেউ। ক্যানিংয়ের এক পলিক্লিনিকের মালিক শুভাশিস সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যে সমস্ত ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা করতে আসেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই এখন রোগীদের ফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে কিছুটা হলেও সমস্যা মিটছে।’’
ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ চন্দ্রকান্ত পণ্ডা বলেন, ‘‘অনেক রোগী ফোন করে আমাদের কাছে পরামর্শ চাইছেন। আমরা তাঁদের কথা শুনে প্রয়োজন হলে সরকারি হাসপাতলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। ওষুধ লাগলে সেটাও বলে দিচ্ছি।’’ ক্যানিংয়ে নিয়মিত চেম্বার করা চিকিৎসক শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘যা পরিস্থিতি তাতে রোগীদের কাছে পৌঁছতে পারছি না। তবে যাঁরা ফোনে যোগাযোগ করছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কথা শুনে পরামর্শ দিচ্ছি। খুব বেশি অসুবিধা হলে সরকারি হাসপাতালে যেতে বলছি।’’
চিকিৎসকেরা পাশপাশি আয়ার অভাবেও বিপাকে পড়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের বেশির ভাগই বৃদ্ধ। কোনও দম্পতি নিঃসন্তান, আবার কারও সন্তান বিদেশে থাকেন। লকডাউনে আয়া-পরিচারিকারা কাজে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই জেলার বেশির ভাগ জায়গায় ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওষুধের পাইকারি বাজারেও কর্মীরা আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এই সব মানুষের ওষুধেরও সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।