Coronavirus

কবে খুলবে কারখানা, অপেক্ষায় শ্রমিক-মালিক

বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় প্রায় ১৩০টি ছোট বড় চিরুনি কারখানা রয়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র 

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০১:৪০
Share:

বন্ধ: চিরুনি কারখানা। নিজস্ব চিত্র

চিরুনি কারখানায় কাজ করে সংসার চালাতেন বনগাঁর জয়পুরের বাসিন্দা তুষার মণ্ডল। দৈনিক আয় ছিল ৩০০ টাকা। কিন্ত এখন কারখানা বন্ধ থাকায়, তাঁর আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাঁচজনকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন তুষার।

Advertisement

তাঁর কথায়, ‘‘কারখানায় কাজ করে দৈনিক তিনশো টাকা আয় করতাম। এখন কাজ বন্ধ। পরিবারে পাঁচজন সদস্য। একবেলা ঠিক মতো খাওয়া হচ্ছে না এখন। সকালে চা খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছি। কারখানা কবে খুলবে, সেই অপেক্ষাই করছি।’’ শুধু তুষার নন, বনগাঁর কয়েক’শো চিরুনি শ্রমিক কাজ হারিয়ে এখন এই পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন।

বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁয় প্রায় ১৩০টি ছোট বড় চিরুনি কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলি বন্ধ। ফলে শ্রমিকদের রুজি-রোজগারও বন্ধ। লকডাউনের সময় বিকল্প কাজ করার সুযোগ নেই। অসিত অধিকারী, অনিল পালের মতো চিরুনি শ্রমিকেরা জানান, ‘‘কী ভাবে সংসার চালাব জানি না। সরকারি সাহায্য না পেলে পথে বসতে হবে। ঘরে চাল, ডাল যা ছিল সবই প্রায় শেষ।’’ ইউনিয়নের তরফে চারশো শ্রমিকেরা একদিন সামান্য পরিমাণ চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সেন বলেন, ‘‘কারখানা মালিকেরা শ্রমিকদের চাল, ডাল, আলু, সয়াবিন, বিস্কুট দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। শীঘ্রই আমরা তা শ্রমিকদের মধ্যে বিলি করব। তবে এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক পরিবারগুলিকে বাঁচাতে আরও সাহায্যের প্রয়োজন। ইউনিয়নের তরফে আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।’’ কারখানা বন্ধ থাকায় রোজগার বন্ধ কারখানার মালিকদেরও। বনগাঁর তৈরি চিরুনির ভাল চাহিদা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ-সহ দেশের অনেক রাজ্যে। লকডাউনের কারণে ওই সব রাজ্যে চিরুনি পাঠানো বন্ধ। চিরুনি তৈরির অ্যাসিট্রেট বাইরে থেকে আসছে না। চিরুনি কারখানার মালিকেরা জানাচ্ছেন, বনগাঁর চিরুনি শিল্প কার্যত ধুঁকছিল। কোনও মতে চলছিল ব্যবসা। লকডাউন এই শিল্পের কফিনে কার্যত শেষ পেরেকটি মেরে দিয়েছে। বনগাঁ সেলুলয়েড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহাদেব ঘোষ বলেন, ‘‘শুরুটা হয়েছিল নোট বাতিলের সময় থেকে। সেই ধাক্কা কোনও ভাবে কাটিয়ে উঠতে না উঠতে জিএসটি ও আর্থিক মন্দার ধাক্কা। এখন লকডাউনের জেরে কারখানা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাইরের রাজ্যে চিরুনি বিক্রির টাকা পড়ে আছে। ওখানকার ব্যবসায়ীরা টাকা পাঠাতে পারছেন না। আমরাও সঙ্কটে পড়েছি।’’ শ্রমিকদের সাধ্যমতো সাহায্য করা হচ্ছে বলে মালিকেরা জানিয়েছেন। জানুয়ারি মাস থেকে শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। লকডাউনের আগে পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। এরমধ্যে শুরু হল লকডাউন। রঞ্জন বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে চিরুনি শ্রমিকেরা অনেক দিন ধরেই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। এখন কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তাঁরা পথে বসেছেন।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন