Coronavirus

টাকা তুলতে লাইন, ভাঙল শারীরিক দূরত্বের বিধি

দিনমজুরি করে সংসার চলে। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজকর্ম সব বন্ধ। কোনও টাকা পয়সা হাতে নেই। এই টাকাটা পেলে ক’দিন সংসার চলবে। তাই সকাল সকাল লাইনে দাঁড়িয়েছি। সাকিলা বিবি ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দালকডাউনের জেরে দিন আনা দিন খাওয়া বহু মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেশনে বিনামূল্যে চাল-আটা মিললেও অন্য খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন অনেকেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪০
Share:

ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। হিঙ্গলগঞ্জে। ছবি: নির্মল বসু

সরকারি ঘোষণা মতোই প্রধানমন্ত্রী জনধন প্রকল্পে পাঁচশো টাকা করে পাচ্ছেন দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষজন। সম্প্রতি সরাসরি সেই টাকা গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। টাকা তুলতে ক’দিন থেকেই ভিড় বাড়ছিল ব্যাঙ্কগুলির সামনে। টাকা আসার খবর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তেই মঙ্গলবার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। করোনা-পরিস্থিতিতে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ শিকেয় তুলে ঘেঁষাঘেঁষি লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেল বহু মানুষকে। কোথাও কোথাও ব্যাঙ্কের সামনে কয়েকশো মানুষের লাইনও চোখে পড়েছে। ক্যানিং থেকে কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার থেকে জয়নগর— এ দিন সকাল থেকে সব জায়গাতেই দেখা গিয়েছে এক ছবি।

Advertisement

লকডাউনের জেরে দিন আনা দিন খাওয়া বহু মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেশনে বিনামূল্যে চাল-আটা মিললেও অন্য খরচ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন অনেকেই। এ দিন লাইনে দাঁড়ানো বহু মানুষই জানান, এই পরিস্থিতিতে পাঁচশো টাকা তাঁদের কাছে অনেক। তাই তা হাতে পেতে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে ডায়মন্ড হারবারের হাজিপুর পাড়ার সাকিলা বিবি বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে সংসার চলে। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজকর্ম সব বন্ধ। কোনও টাকা পয়সা হাতে নেই। এই টাকাটা পেলে ক’দিন সংসার চলবে। তাই সকাল সকাল লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’

লকডাউনের জেরে রাস্তায় গাড়ি চলছে না। অনেকেই তাই ৩-৪ কিলোমিটার হেঁটে এসে ব্যাঙ্কে লাইন দেন। এ দিকে জনধন প্রকল্পের টাকা তোলার ভিড়ে ব্যাঙ্কের অন্যান্য কাজকর্ম ব্যাহত হয় বহু জায়গায়। মাসের শুরুতে অনেকেই পেনশন তোলা বা ঋণের কিস্তি জমা দেওয়ার কাজে ব্যাঙ্কে এসেছিলেন। তাঁদেরও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু মানুষের জনধন অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যে টাকা ঢুকলেও অনেকের তা আসেনি। তাঁরা পাসবই আপডেট করে টাকা ঢুকেছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। আবার জনধন অ্যাকাউন্ট নেই, এমন অনেকেও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দেন।

Advertisement

কিন্তু এ ভাবে ভিড় করে লাইন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে লাইন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভাঙড় ও কাশীপুর থানার পুলিশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্রাঞ্চের ভিতর এক সঙ্গে বহু মানুষের ঢোকা বন্ধ করে দেন। পুলিশের নজরদারিতে চারজন করে ভিতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়। ব্যাঙ্কের ভিতরেও কর্মীদের থেকে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দড়ি দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যাঙ্কগুলোর সামনে ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার সচেতনও করা হয়। এ দিন ঘটকপুকুর স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে দেখা যায়, সাবান জল দিয়ে হাত ধুয়ে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। জয়নগরের প্রিয়র মোড়ে একটি ব্যাঙ্কের শাখায় কয়েকশো মানুষ লাইন দেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না, এই অভিযোগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানায় একটি মানবাধিকার সংগঠন।

এ দিন হিঙ্গলগঞ্জে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দেখা গেল গ্রাহকদের লম্বা লাইন। সেখানে দাঁড়ানো স্থানীয় চার নম্বর সান্ডেলের বিল এলাকার বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, “দেড় ঘন্টার উপর ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন টাকা তুলতে পারব জানি না। টাকা তোলাটা নেহাতই দরকার। তা না হলে চড়া রোদ মাথায় নিয়ে লাইনে দাঁড়াতাম না।”

দক্ষিণ হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা চন্দনা বিশ্বাস বলেন, “ব্যাঙ্ক থেকে বলছে, মাস্ক না পড়লে ভিতরে ঢুকতে দেবে না। আমাদের কাছে মাস্ক কেনার মতোও টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে শাড়ি দিয়েই মুখ ঢেকে নিয়েছি।” ব্যাঙ্কের কর্মীরা গ্রাহকদের হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে তবেই ভিতরে ঢুকতে দিয়েছেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন