Coronavirus

ভরা চৈত্রে সুনসান জেলার সেলের বাজার

বসিরহাটের পুরাতন বাজার বেশ জমজমাট। সেখানে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে অস্থায়ী দোকান তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫০
Share:

বন্ধ: দোকানপাট। বসিরহাটে। নিজস্ব চিত্র

চৈত্র সেলের বাজারে কেনাকাটা করা বাঙালি জীবনে এক পরব হয়ে দাঁড়িয়েছে। চৈত্র সেলের কেনাবেচার দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকেন বহু ক্রেতা-বিক্রেতা। লকডাউনের গেরোয় এ বার চৈত্র সেল শিকেয় উঠেছে। ফলে কাঁচরাপাড়া থেকে বনগাঁ, বসিরহাট— সর্বত্রই এক ছবি। লোকসানের আশঙ্কায় ঘুম ছুটেছে ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

বসিরহাটের নতুন বাজারে পোশাকের দোকান কার্তিক পালের। চৈত্র সেলের জন্য দোকানের সামনে আলাদা করে ম্যারাপ বেঁধে প্যান্ডেল করেছেন তিনি। ফুলিয়া এবং বড়বাজার থেকে ১০ লক্ষেরও বেশি টাকার শাড়ি এবং অন্যান্য পোশাক তুলেছেন। অন্যান্য বার ভিড় সামলাতে ১০-১২ জন কর্মচারী রাখতে হয়। আর এ বার দোকানই খুলতে পারেননি তিনি। রোজ বন্ধ দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান এক বার। পোশাক তোলার জন্য মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছিল। সেই ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন, কী করেই বা কর্মচারীদের বেতন মেটাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।

বসিরহাটের পুরাতন বাজার বেশ জমজমাট। সেখানে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে অস্থায়ী দোকান তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবার মনোহারি, আসবাব থেকে শুরু করে ঝুটো গয়না, কাপ-প্লেটের দোকান বসে। এ বারও ৩০টি অস্থায়ী দোকান করা হয়েছে বাজারে। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত পাল জানান, ১৫ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে ওই জায়গা ভাড়া নেন। ব্যবসায়ী স্বপন দেবনাথ, সৈকত ঘোষ বলেন, “যদি লকডাউন ক’দিনের মধ্যে উঠেও যায়, তা হলেও চৈত্র সেলের জিনিসপত্র মে মাসে ইদের বাজারে বিক্রি করতে হবে। চৈত্র সেলের জন্য আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হচ্ছে।”

Advertisement

বসিরহাট জামরুলতলা-সহ আরও দু’টো বাজারে অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁরাও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। পাশাপাশি, মিনাখাঁ, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, হাসনাবাদ, স্বরূপনগরে ব্যবসায়ীরাও চৈত্র সেলের বাজারের দিকেই সারা বছর তাকিয়ে থাকেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা অস্থায়ী দোকানও তৈরি করে ফেলেছেন। লকডাউনে এখন তাঁদের মাথায় হাত।

চৈত্র সেলের অন্যতম বড় বাজার কাঁচরাপাড়া। উত্তর ২৪ পরগনা তো বটেই, সেলে কেনাকাটা করতে নদিয়া, হুগলি, বর্ধমানের কিছু জায়গা থেকেও ক্রেতারা আসেন এখানে। কয়েকটি বাজারের পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন সংস্থার শো-রুম রয়েছে। বেশ কয়েকটি শপিং মল এবং বড় দোকানও রয়েছে কাঁচরাপাড়ায়। তার ফলে পুরো চৈত্র মাস জমজমাট থাকে এই মফসসল শহর। এ বার ঝাঁপ বন্ধ সব ক’টি বাজারের। একটি বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী সুকোমল সরকার বলেন, “ঋণ নিয়ে মাল তুলেছি। বিক্রিবাটা না হলে লোকসানের ধাক্কা সামলানো মুশকিল হবে। আমার মতো অনেকেই বিপদে পড়বেন। লকডাউন উঠে গেলে যদি সেলের বাজার চালু করা যায়, তা হলেও কিছুটা সঙ্কট কাটে।” বিপাকে পড়েছেন ব্যারাকপুরের রচনা সিকদারও। পেশায় স্কুল শিক্ষিকা রচনা বলেন, “বেড কভার, পিলো কভার-সহ সারা বছরের বেশ কিছু জিনিস আমি সেলেই কিনি। আসলে সেলের সময়ে সব এক সঙ্গে কাঁচরাপাড়ার বাজারে পেয়েও যাই। দামেও সস্তা পড়ে। এ বার তো মুশকিলে পড়ে গেলাম!”

বনগাঁ শহরে যশোর রোডে চৈত্র সেলের অস্থায়ী দোকান বসে। পোশাকের দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। বনগাঁ পুরসভার তরফে খেলাঘর মাঠে চৈত্র সেলের মেলার আয়োজন করা প্রতি বছর। এ বার তা শুরু হয়নি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “সারা বছর চৈত্র সেলের দিকে তাকিয়ে থাকি। ভালো ব্যবসা হয়। মালপত্র মজুত করা হয়ে গিয়েছিল। চুড়ান্ত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে আমাদের।”

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন