প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাওয়া নিয়ে দূর্ণীতির অভিযোগের তালিকায় এ বার নাম জুড়ল কাকদ্বীপ মহকুমার। অভিযোগ, সংরক্ষিত শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও কাকদ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক স্কুলের পার্শ্বশিক্ষকেরা এ বছর চাকরি পাননি। চাকরি না পাওয়া ‘যোগ্য’ প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনে রয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য ৫৫১টি সংরক্ষিত আসন ছিল। কিন্তু শেষ প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় জেলা থেকে মাত্র ১৩২ জন পার্শ্বশিক্ষক উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তার পরেও জেলার টেট উত্তীর্ণ পার্শ্বশিক্ষকদের অনেকেই এ বার চাকরি পাননি। প্যানেল সংশোধনের আবেদন জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছেন তাঁরা।
সূর্যনগর পঞ্চায়েতের মাঝিপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্বশিক্ষক তাপসকুমার প্রামাণিক ১০ বছর ধরে পার্শ্বশিক্ষকের কাজ করছেন। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৩৭ বছর। প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত প্যানেলে তাঁর শিকে ছেঁড়েনি। তাপসবাবুর অভিযোগ, ‘‘জেলায় পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত শূন্যপদের থেকে অনেক কম পার্শ্বশিক্ষক এ বার টেট উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আমাদের চাকরি পেলাম না।’’ তাঁর দাবি, পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত পদে অনেক ভুয়ো প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। তাপসবাবু নিজে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল পার্শ্বশিক্ষক সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক। তাঁর দাবি, তিনি দলের কাছে বিষয়টি দেখার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। তবে এখন মামলা করার সিদ্ধান্ত নেননি।
কাকদ্বীপের শ্রীনগর পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন নজরুল হক মোল্লা। বয়স ৪৮ বছর। এ বছর প্রাথমিক টেট পাশ করেছেন। কিন্তু চাকরি পাননি। তিনিও তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘পরিবারের সাত জন সদস্য আমার উপর নির্ভরশীল। আমি আসল প্রার্থী। স্থায়ী চাকরির খুবই প্রয়োজন।’’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে মন্ত্রী—সব জায়গায় দরবার করছেন তাঁরা। তাপসবাবুদের দাবি, সাগরের রবীন্দ্রনাথ পাল, পাথরপ্রতিমার বিষ্ণুপদ হালদার, নামখানার শুভেন্দু হালদারের মতো অনেক টেট উর্ত্তীণ পার্শ্বশিক্ষক এ বার চাকরি পাননি। তাঁদের দাবি, গোটা জেলায় মাত্র ৭০ জন পার্শ্বশিক্ষক এ বার চাকরি পেয়েছেন। পার্শ্বশিক্ষকদের একাংশের দাবি, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ঘনশ্রী বাগ জানান, অভিযোগ পেলে সেগুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্যানেল তৈরি করেছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। জেলার পার্শ্বশিক্ষকদের অভিযোগ থাকলে সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।’’