আরামডাঙায় বেআইনি মদের দোকান ভাঙছেন মহিলারা। ফাইল চিত্র
চোলাই, দেশি মদের কারবার নিয়ে উত্তর ২৪ জেলার নানা প্রান্তে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ-প্রশাসন অভিযানও চালায়। ধরপাকড় হয়। কোথাও কোথাও স্থানীয় মানুষজন মদের ঠেক গুঁড়িয়ে দেন। অভিযোগ, তারপরেও ফের গজিয়ে ঠেক। ফের শুরু হয় বেআইনি দেশি মদের কারবার। ইদানীং মুদির দোকান, মনোহারি দোকান, চায়ের দোকানের আড়ালেও কোথাও কোথাও বেআইনি ভাবে বিক্রি হচ্ছে দেশি মদ। মোবাইলে ফোন করলে সাইকেল-বাইকে চড়ে ক্যারিয়ারেরা ‘হোম ডেলিভারি’ও করছে মদের।
অতীতে বনগাঁ মহকুমায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার ছিল। আমডোব, গাঙ্গুলিয়া, মুড়িঘাটা, পারমাদনের মতো এলাকায় চোলাইয়ের কারবার চলত। স্থানীয় ভাবে তা তৈরি হত। বনগাঁর বাইরে থেকেও গাড়ি করে চোলাই পৌঁছে যেত প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে।
পুলিশ-প্রশাসনের লাগাতার ধরপাকড় ও গ্রামবাসীদের নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজনের ফলে চোলাইয়ের কারবার ইদানীং কমেছে। তার জায়গা নিয়েছে দেশি মদ।
গোপালনগরের বৃদ্ধপাল্লা বাজারের একটি মুদির দোকানে সকাল-সন্ধ্যা গাঁয়ের লোকজন ভিড় করতেন মালপত্র কিনতে। কিন্তু সন্ধের পরে সেই দোকানেই আসত অন্য ধরনের ক্রেতারা। দোকানি শ্যামল বিশ্বাসের সঙ্গে চোখের ইশারায় কথা হত। দেশি মদের কারবার চলত ওই দোকান থেকে। ক’দিন আগে সেই খবর পেয়ে পুলিশ শ্যামলকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় কয়েক লিটার দেশি মদ। গোপালনগর থেকে মদের ফেরিওয়ালাও গ্রেফতার হয়েছে এর আগে। সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেশি মদ বেশি দামে বিক্রি করত সে। দাম পড়ত কিছু বেশি। কিন্তু বাড়ি বা আড্ডাখানায় বসে হাতে হাতে মদ কিনতে বেশি টাকা দিতে দ্বিধা করেন না ক্রেতারা। পুলিশ জানতে পেরেছে, ৬০০ এমএল দেশি মদ কাউন্টারে বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। হোম ডেলিভারি ও দোকানে তা বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকায়।
সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে দেশি মদ কিনে এনে তা বেআইনি ভাবে দোকান থেকে বিক্রির কারবার চলছে নানা জায়গায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈধ দোকান থেকে দেশি মদ কিনে তার মধ্যে নানা রাসায়নিক মিশিয়ে পরিমাণে বাড়িয়েও বিক্রি করা হয়। এর ফলে মানুষ অনেক সময়ে ওই মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
দিন কয়েক আগে বাগদা থানার আউলডাঙা এলাকায় মদের নেশায় আসক্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এলাকায় কয়েকটি মুদিখানা এবং অন্য দোকানে বেআইনি ভাবে দেশি মদ বিক্রি হত। মৃত ব্যক্তির মতো অনেকেই ওই সব দোকান থেকে মদ কিনে খেতেন। ঘটনার পরে এলাকার মহিলারা জোটবদ্ধ হয়ে কয়েকটি মুদির দোকানে ভাঙচুর চালান।
স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীব মল্লিক জানালেন, ওই ঘটনার পরে চোরাগোপ্তা মদ বিক্রির এই কারবার বন্ধ হয়েছে। বাগদার সাঁড়াহাটি, গোপালনগরের সাতবেড়িয়া ও বনগাঁর আরামডাঙা এলাকাতেও মহিলারা বেআইনি ভাবে মদ বিক্রির দোকান ভেঙে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি দেশি মদের কারবার বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। নেশা বন্ধ করতে পুলিশের তরফে প্রচারও করা হচ্ছে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় নিজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মদের নেশা বন্ধ করতে মানুষের কাছে আবেদন করছেন। এসডিপিও বলেন, ‘‘প্রতি মাসে মহকুমা থেকে গড়ে ৩৫ জন বেআইনি মদ কারবারিকে পুলিশ গ্রেফতার করছে। আটক হচ্ছে প্রচুর দেশি মদ। মহকুমার থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশি অভিযান আরও বাড়াতে। গ্রামের দোকানগুলিতে আরও নজরদরি চালানো হবে।’’