প্রতীকী ছবি।
বন্ধ দরজার সামনে পড়ে ভাঙা শাঁখা, পলা। বারবার ধাক্কা দিলেও ভিতর থেকে কেউ খুলছেন না সেই দরজা। বেশ কিছু ক্ষণ পরে ভিতর থেকে ভেসে এসেছিল এক শিশুর কান্না জড়ানো ডাক। সে বলেছিল, ‘দিদি, আমাকে বার করো’।
সেই শিশুকে টিউশন দিতে গিয়ে এমন ঘটনায় চমকে গিয়েছিলেন তরুণী। তিনি ডেকে আনেন এলাকার লোকজনকে। শেষে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে সকলে দেখলেন, গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে ওই খুদে পড়ুয়ার বাবার দেহ। আর মেঝেতে পড়ে রয়েছে মায়ের নিথর দেহ। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আগরপাড়ায়। খড়দহ থানার পুলিশ এসে মৃতদেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম অমল মণ্ডল (৩৫) ও বিন্দা ভকত (২৮)।
পুলিশ সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগে আগরপাড়ার পীরতলায় স্ত্রী বিন্দা ও সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাড়া এসেছিলেন অমল। বাড়িওয়ালা কাবুল দাসকে ওই যুবক জানিয়েছিলেন, তিনি ঠিকাদারের অধীনে বাড়িতে নকল সিলিং বানানোর কাজ করেন। অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ সঙ্গীতা সাহা নামের ওই গৃহশিক্ষিকা অমলবাবুদের বাড়িতে যান। ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘরে দরজার সামনেই ভাঙা শাঁখা-পলা দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। বারবার ওই দম্পতির নাম ধরে ডাকলেও কেউ দরজা খুলছিলেন না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সঙ্গীতা জানান, এর পরেই তিনি দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করলে ভিতর থেকে ছাত্রীর গলা শুনতে পান। এর পরেই তিনি কাবুলবাবুদের ডাকেন। চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরাও সেখানে জড়ো হন। কাবুলবাবু জানান, সকলে মিলে বারবার দরজা ধাক্কা দিলেও তা না খোলায় শেষে এক জন হাতুড়ি নিয়ে এসে দরজাটি ভাঙেন। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বেরিয়ে আসে শিশুটি। অন্ধকার ঘরে ঢুকে সকলে দেখেন, সিলিং ফ্যান থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন অমল। আর খাটের পাশে পড়ে রয়েছেন বিন্দা। তাঁর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। সারা ঘরে মাংস ও ভাত ছড়ানো। আর বিছানার উপরে পড়ে রয়েছে বাচ্চাটির স্লেট। তাতে খড়ি দিয়ে লেখা ‘আমি বিন্দাকে নিয়ে সুখের ঠিকানায় চললাম। বাচ্চাটি রইল। তোমরা দেখো।’
প্রতিবেশীরা জানান, এলাকার সকলের সঙ্গে খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল ওই দম্পতির। তেমন কোনও অশান্তিও চোখে পড়েনি কারও। সঙ্গীতা বলেন, ‘‘১০ দিন হল পড়াচ্ছি। দাদা-বৌদি দু’জনেই খুব ভাল ব্যবহার করতেন। আমাকে বোন বলে ডাকতেন।’’ তবে প্রতিবেশীদের থেকে পুলিশ জেনেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ওই দম্পতির মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, ঘোলার কর্ণমাধবপুরের বাসিন্দা বিন্দার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী অমল। এ দিন খবর পেয়ে বিন্দার বাপেরবাড়ির লোকেরা থানায় এসে দাবি করেন, তাঁরাও ওই দম্পতির মধ্যে তেমন কোনও অশান্তির কথা জানতেন না। ওই যুবকের নদিয়ার বাড়িতেও খবর দিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বিন্দার। অমল আত্মহত্যা করেছেন বলেই অনুমান পুলিশের। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।