প্রতিরোধে ‘ঢিলেমি’, রোগের ঘেরাটোপে দেগঙ্গা

২০১৭ সালে ডেঙ্গি কার্যত মহামারীর আকার নেয় উত্তর ২৪ পরগনায়। দেগঙ্গায় জ্বর এবং ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন কয়েক হাজার মানুষ।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫২
Share:

অপেক্ষা: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এ ভাবেই ভিড় করছেন স্থানীয় মানুষ। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

আগাম সতর্কতা, প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে কী হয়, আর না নিতে পারলে তার ফল কী হতে পারে— দু’টোই এই বছর যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল দেগঙ্গা।

Advertisement

২০১৭ সালে ডেঙ্গি কার্যত মহামারীর আকার নেয় উত্তর ২৪ পরগনায়। দেগঙ্গায় জ্বর এবং ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন কয়েক হাজার মানুষ। মৃত্যু হয় ১৯৬ জনের। যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরকে তুলোধোনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে ২০১৮ সালে ডেঙ্গি রুখতে স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন, পুরসভা, পঞ্চায়েত-সবাই সক্রিয় হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে নেমে যায় মাত্র দু’জনে।

অভিযোগ, ২০১৯ সালে ফের সেই ‘ঢিলেমি’, দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। তার ফাঁকে ডেঙ্গি ও জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে দেগঙ্গা-সহ উত্তর ২৪ পরগনায়।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, বিধাননগর, লেক টাউন, দমদম, দেগঙ্গা, হাবরা মিলিয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, অক্টোবর পর্যন্ত কেবল মাত্র দেগঙ্গায় জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯৭ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ডেঙ্গি কিংবা জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা এখনও পর্যন্ত আট জন।

জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গি, জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। তবে সর্বত্র সাফাইয়ের কাজ, নজরদারি চলছে। চিকিৎসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করাও চলছে।’’ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন সাহা বলেন, ‘‘উপদ্রুত এলাকায়ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত যাচ্ছেন।’’

অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে ক্ষুব্ধ উপদ্রুত এলাকার লোকজন জানান, বিশ্বনাথপুরে দেগঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জ্বর ও ডেঙ্গি আক্রান্তদের ভিড় প্রতিদিন বাড়ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে খবর, প্রতিদিন এক হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য লাইন দিচ্ছেন। মীনাক্ষী ঘোষদাস নামে এক আশাকর্মী বলেন, ‘‘জ্বর, ডেঙ্গি আক্রান্তদের ওষুধ দিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছিলাম। এখন আমি নিজেই জ্বরে কাবু হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছি। এলাকার পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক।’’

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ জানান, দেগঙ্গার ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকায় জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। চাকলা ও আমুলিয়ায় জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমুলিয়ায় ৭৩ জন ও চাকলায় ৭৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’

কিন্তু ওই দুই এলাকায় প্রকোপ এত বেশি কেন?

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূল পরিচালিত আমুলিয়া পঞ্চায়েতে উপ-সমিতি গঠন বছর দু’য়েক বন্ধ ছিল। ডেঙ্গি প্রতিরোধ, উন্নয়ন— সব কাজই বন্ধ ছিল ওই পঞ্চায়েতে। বাসিন্দারা জানান, মাস দেড়েক হল উপ-সমিতি গঠন হলেও ইতিমধ্যেই এলাকায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ সবের মধ্যেও আবার তরজা শুরু হয়েছে। ওই পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান জিলহাজ বেগমের অভিযোগ, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত থেকে কর্মী নিয়োগ করে কাজ করছিলাম। এখন ব্লক প্রশাসন থেকে খুশি মতো নিয়োগ করে কাজ করানোয় ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না।’’ অন্য দিকে বিডিও সুব্রত মল্লিক পাল্টা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতই নিজেদের মতো করে লোক নেওয়ায় পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল।’’

সূত্রের খবর, হাবড়া-অশোনগরে ইতিমধ্যে জ্বর, ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। হাবরা সংলগ্ন চাকলায় দেখা গেল, নিকাশি নালা আটকে প্লাস্টিকে। জল জমে রয়েছে যত্রতত্র। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাফাই বা মশা মারার জন্য কাউকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

ঘরে ঘরে জ্বর আমুলিয়াতেও। জ্বরে কাবু পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ছাত্রী মিনজানা পরভিন জানান, তাঁদের বাড়িতে সবার জ্বর।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তাঁর কাকা বারাসত হাসপাতালে ভর্তি। আতঙ্কিত মিনজানা বলেন, ‘‘ভয় লাগছে, কাকা ফিরবে তো!’’ এমন আতঙ্কে এখন দেগঙ্গার বহু রোগীরই পরিজনদের দিন কাটছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন