প্রতিবাদ করাতেই কি ‘খুন’ গৃহবধূ

নুরুজ্জামান বলেন, ‘‘ছোট থেকেই অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকতে পারত না মেয়ে। শাশুড়ির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও মেনে নিতে পারেনি। সেটাই কাল হল।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৩
Share:

রাহানা পরভিন

শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাত দিন লড়াই চালানোর পরে শনিবার সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দেগঙ্গার জামালপুর-হাটখোলার বাসিন্দা রাহানা পরভিনের (১৮)। সেই ঘটনায় মৃতার শাশুড়ি আছিয়া বিবিকে শনিবার রাতেই গ্রেফতার করল দেগঙ্গা থানার পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের দাবি, শাশুড়ির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক দেখে ফেলেছিলেন রাহানা। তার প্রতিবাদ করেছিলেন। বাপের বাড়িতে এবং স্বামীকে সব জানিয়েছিলেন। সে কারণেই এই ঘটনা কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।

Advertisement

বছর পঁয়তাল্লিশের আছিয়ার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাহানার বাপের বাড়ির লোকেদের অভিযোগ ছিল, দাবি মতো পণ দেওয়া হলেও আরও পণের দাবিতে বিয়ের পর থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন আছিয়া। সব মুখ বুজে সহ্য করতেন বছর আঠেরোর মেয়েটি। কিন্তু শাশুড়ির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলে প্রতিবাদ করার পরেই নির্যাতন বেড়ে যায়।

পুলিশ জানায়, রাহানা মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, শাশুড়ির অত্যচার সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও মৃতার পরিজনেদের অভিযোগ, আছিয়াই রাহানার গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মেরেছেন। শাশুড়ির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের পরে যদি ওই বধূকে খুন করা হয়েছে বলে সূত্র মেলে, তা হলে প্রয়োজনীয় ধারা যোগ করা হবে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়াই বছর আগে হাড়োয়া থানার শ্যামলা গ্রামের নুরুজ্জামানের মেয়ে রাহানার সঙ্গে বিয়ে হয় জামালপুরের জাকির হোসেন মণ্ডলের। পেশায় দিনমজুর নুরুজ্জামানের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে রেহানা ছিলেন বড়। অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। জাকিরের সঙ্গে প্রথমে রাহানার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরে দু’টি পরিবার সামাজিক মতে তাঁদের বিয়ে দেয়।

নুরুজ্জামান বলেন, ‘‘এক দিন কাজে না গেলে আমাদের খাওয়া জোটে না। তার মধ্যেও মেয়ের শাশুড়ির দাবি মতো বিয়েতে নগদ ৬০ হাজার টাকা, সোনার গয়না, খাট-বিছানা দিয়েছিলাম। তার পরেও আরও পণের দাবিতে শাশুড়ি মেয়ের উপরে অত্যাচার করত।’’ পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, নির্যাতনের কারণে কয়েক বার বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন রাহানা। নুরুজ্জামান বলেন, ‘‘মেয়েকে বুঝিয়ে আমরা ফের শ্বশুবাড়িতে পাঠাই। বলতাম, শাশুড়ি মায়ের মতো। একটু মানিয়ে চলতে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘তখন বুঝিনি, শাশুড়ি এত অমানবিকও হতে পারে।’’

তদন্তকারীরা জেনেছেন, দিন কয়েক আগে রাহানার নজরে আসে, এক ব্যক্তি বাড়িতে যাতায়াত করছেন। মাঝেমধ্যে শাশুড়ির সঙ্গে থাকছেনও তিনি। তখনই রাহানা বুঝতে পারেন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন আছিয়া। অভিযোগ, শাশুড়িকে বারণ করলেও তিনি শোনেননি। তখন রাহানা জাকিরকে সব কিছু বলেন। ছেলেও মাকে ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। অভিযোগ, এর পরেই আছিয়ার রাগ গিয়ে পড়ে রাহানার উপরে। নির্যাতন আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। ঘটনার দিন স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে পুড়ে যান জাকিরও। তিনি এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরজি করে ভর্তি।

নুরুজ্জামান বলেন, ‘‘ছোট থেকেই অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকতে পারত না মেয়ে। শাশুড়ির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও মেনে নিতে পারেনি। সেটাই কাল হল।’’ রাহানার জ্যাঠা শেখ রিয়াজুল ইসলামেরও অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় রাহানাকে খুন করেছেন আছিয়া। ওই দম্পতির দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ছেলে ও নাতিরও ক্ষতি করলেন আছিয়া। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বৌমার ভুল হলে শাশুড়ি শাসন করতে পারত। কিন্তু তা বলে একেবারে মেরে ফেলবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন