Dengue

ডেঙ্গির থাবা মধ্যমগ্রাম, বারাসতেও

হৃদয়পুরের ওই নার্সিংহোমের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘জ্বরের রোগীদের চাপে নার্সিংহোমগুলিতেও আর রোগী ভর্তি নেওয়ার উপায় নেই। ভয়ানক পরিস্থিতি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিধাননগর ও দক্ষিণ দমদমের পরে ডেঙ্গি আর অজানা জ্বর এ বার ছড়িয়ে পড়ছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, মধ্যমগ্রাম, কদম্বগাছি ও দত্তপুকুরের মতো এলাকাতেও। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই জেলায় যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের তিন জনই জেলা সদর বারাসত সংলগ্ন অ়ঞ্চলের। ওই সমস্ত এলাকায় প্রচুর মানুষ এখন ভিড় করছেন বারাসত ও মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে। রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে দেখা যাচ্ছে চিন্তিত মুখে রোগীদের দীর্ঘ লাইন।

Advertisement

এমনিতেই মশার দাপটের নিরিখে বারাসত-মধ্যমগ্রামের জুড়ি মেলা ভার। মশাবাহিত কোনও রোগই এই এলাকায় নতুন নয়। নিকাশির বেহাল দশা। জল দাঁড়িয়ে যায় অল্প বৃষ্টিতেই। ফলে সহজেই যত্রতত্র গড়ে ওঠে মশার আঁতুড়ঘর। নর্দমায় জমে থাকা আবর্জনায় ভনভন করে মশা-মাছি। বারাসত হাসপাতালের এক চিকিৎসক এ দিন বলেন, ‘‘ক’দিন ধরে জ্বর নিয়ে এলাকার মানুষ যে হারে দেখাতে আসছেন, তাতে এই সব এলাকায় ডেঙ্গি বা অজানা জ্বরের প্রকোপ আরও বাড়লে পরিস্থিতি যে কী দাঁড়াবে, ভেবেই আতঙ্ক হচ্ছে।’’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী সমরেশ ঘোষকে (৪৮) মধ্যমগ্রাম মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে আনা হয় বারাসতের একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই বুধবার রাতে মারা যান তিনি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে, ডেঙ্গি। সেই নার্সিংহোমে দাঁড়িয়েই হৃদয়পুরের বাসিন্দা অরিন্দম সাহা এ দিন বলেন, ‘‘সমরেশের মতো তরতাজা মানুষ এ ভাবে মারা যাওয়ায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছি। আমার বাড়িতেও ক’দিন ধরে মা-বাবার জ্বর।’’ বারাসত হাসপাতাল-সহ সরকারি কোনও হাসপাতালেই জ্বরের রোগীদের আর ভর্তি নেওয়ার উপায় নেই। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাই কোনও মতে মেঝেতে ঠাঁই পেয়েছেন। হৃদয়পুরের ওই নার্সিংহোমের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘জ্বরের রোগীদের চাপে নার্সিংহোমগুলিতেও আর রোগী ভর্তি নেওয়ার উপায় নেই। ভয়ানক পরিস্থিতি।’’

Advertisement

মাস দুই আগে এ জেলার দমদম, দক্ষিণ দমদম, সল্টলেক ও কামারহাটির মতো এলাকায় ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরের প্রকোপ নিয়ে বৈঠক করেছিল জেলা প্রশাসন।
ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভাগুলি যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না এবং মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে না বলে সেখানে সমালোচনাও হয়। এর কিছু দিন পরে জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলিতে শুরু হয় ডেঙ্গি ও জ্বরের প্রকোপ। দেগঙ্গা, বসিরহাট, বনগাঁ আর হাবরা এলাকায় বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার। এ বার বারাসত, দত্তপুকুর, কদম্বগাছি, মধ্যমগ্রামের মতো এলাকাতেও জ্বরের প্রকোপ শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

সরকারি জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা না করানোর নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এ দিকে, কাছাকাছির মধ্যে বারাসত জেলা হাসপাতালে দিনে ২০০ জনের বেশি রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে বেসরকারি রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিড় করছেন মানুষ। সেখানেও বিপদ। বারাসতের একটি বেসরকারি রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্রের এক কর্মী বললেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর থেকে নানা বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’ কী সতর্কতা? প্রশ্ন শুনে চুপ করে যান তিনি। বারাসত স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মধুরা দাস বলেন, ‘‘দু’দিনের জ্বরে এমন কাবু কোনওকালে হইনি। রক্ত পরীক্ষায় প্লেটলেট কমে গিয়েছে বলা হয়েছে। ডেঙ্গি হলেও রিপোর্টে নাকি তা লিখতে বারণ করা হয়েছে। তা হলে কীসের চিকিৎসা করাব, তা-ও বুঝতে পারছি না। এই অজানা জ্বর মানেটা কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন