নেই স্কুল পরিদর্শক, জমে রয়েছে ফাইল

স্কুল পরিদর্শকের পদ খালি। তাই স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন প্রায় বন্ধ। বছর দু’য়েকের বেশি ধরে এই সমস্যা চলছে কাকদ্বীপ এবং কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। ফলে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সমস্যায় পড়েছেন সবাই।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০১:২৫
Share:

স্কুল পরিদর্শকের পদ খালি। তাই স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন প্রায় বন্ধ। বছর দু’য়েকের বেশি ধরে এই সমস্যা চলছে কাকদ্বীপ এবং কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। ফলে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সমস্যায় পড়েছেন সবাই।

Advertisement

জেলা শিক্ষা দফতর (প্রাথমিক) সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার, পঠনপাঠন কেমন হচ্ছে, মিড ডে মিল ঠিকমতো চলছে কি না দেখাই হল স্কুল পরিদর্শকদের প্রধান কাজ। কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে স্কুল পরিদর্শক (এসআই) নেই। কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের আওতায় ৮৪টি প্রাথমিক স্কুল এবং কাকদ্বীপ চক্রে ৬৮টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তাই কাকদ্বীপ চক্রের কাজ সামলাতে হচ্ছে কাকদ্বীপ চক্রের স্কুল পরিদর্শককে। তিনি সপ্তাহে এক দিন কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের অফিসে বসেন। কোনও কোনও সপ্তাহে সেটাও সম্ভব হয় না। ফলে স্কুলের দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নানা ফাইল—আটকে গিয়েছে সব।

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) উদয়ন ভৌমিক। তাঁর গলাতেও স্পষ্ট হতাশা। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানি। তবে শুধু কাকদ্বীপের দু’টি চক্র নয়, আমাদের জেলায় ৫১টি চক্রের জন্য মাত্র ৩৯ জন স্কুল পরিদর্শক রয়েছেন। সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কবে নিয়োগ হবে বলতে পারব না।’’

Advertisement

কী ভাবে চলছে এই দুই চক্রের প্রাথমিক স্কুলগুলির পঠনপাঠন এবং অন্যান্য কাজ?

সামন্তরচক ভগবতী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতীন পণ্ডা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুল বাড়ি সংস্কারের আবেদন পাঠিয়েছিলাম। সেই কাজে অবহেলা হচ্ছে। কিন্তু পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য স্কুলবাড়ি সংস্কার খুব জরুরি।’’ কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের ক্ষোভ, সার্ভিস বুক সংক্রান্ত সমস্যা মিটতে অনেক সময় লাগছে। মাইনের কাগজ (পে সার্টিফিকেট) পেতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। লালমোহনচক অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হরেকৃষ্ণ সাহু জানান, তাঁদের স্কুলে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির পর কোনও পরিদর্শনই হয়নি। দুই চক্রের বাকি স্কুলগুলিরও কম-বেশি একই অবস্থা। পরিদর্শন সংক্রান্ত সমস্যা ছাড়াও স্কুলের ভুল নাম সংশোধন, নিয়োগপত্রে শিক্ষকের নামের বানান সংশোধন, সার্ভিস বুক সংক্রান্ত প্রচুর ফাইল জমে রয়েছে কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের দফতরে। কাজ হচ্ছে শম্বুক গতিতে।

বর্তমানে দু’টি চক্রের যৌথ দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক রমেন দাসের কথায়, ‘‘দু’টি চক্রেই কর্মী কম। মাঝে মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার জন্য প্রায় দুই সপ্তাহ ব্যস্ত ছিলাম। বাকি থাকা সব কাজ মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রের নেতা মানস মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘একজনের পক্ষে দু’টি চক্রের কাজ ঠিকমতো দেখাশোনা করা প্রায় অসম্ভব। কাকদ্বীপের দুটি চক্রের স্কুলগুলিকে দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলা করা হচ্ছে। কাকদ্বীপ দক্ষিণ চক্রে অবিলম্বে পূর্ণ সময়ের স্কুল পরিদর্শক দরকার।’’ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতা তরুণ দাস বলেন, ‘‘আমরা সমস্যার কথা জানি। জমে থাকা কাজগুলি দ্রুত শেষ করে ফেলার চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন