West Bengal Assembly Election 2021

‘উন্নয়নের বন্যা’ চোখে পড়ে না, বলছে বিরোধীরা

স্বরূপনগর ব্লককে দু’ভাগে ভাগ করে বয়ে চলেছে ইছামতী নদী। তার এক দিকে ৩টি, অন্য দিকে ৭টি পঞ্চায়েত। বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া।

Advertisement

নির্মল বসু 

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৪
Share:

দশ বছর আগে তৈরি জল প্রকল্পের উদ্বোধন হল না আজও। নিজস্ব চিত্র।

একাধিকবার শিলান্যাসের পরেও এখনও বেহাল সেতু। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মেশিন বসানো সত্ত্বেও আজও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছয়নি। এমনই সব অনুন্নয়নের পরিস্থিতি নিয়েই ফের ভোট দিতে চলেছেন স্বরূপনগরের মানুষ।

Advertisement

স্বরূপনগর ব্লককে দু’ভাগে ভাগ করে বয়ে চলেছে ইছামতী নদী। তার এক দিকে ৩টি, অন্য দিকে ৭টি পঞ্চায়েত। বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। সোনাই নদী এবং কয়েক হাজার বিঘা বিলবল্লি। ইছামতীর পশ্চিম পাড়ে একাধিক খাল এবং বাওড়ে ঘেরা তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ যদি অসুস্থ হন কিংবা প্রসূতির চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, তবে নদীর উপরে কংক্রিটের সেতু না থাকার কারণে ঘুরপথে আসতে হয়। ২-৩ কিলোমিটারের পথ হয়ে দাঁড়ায় ২৫ কিলোমিটারে। তবে পৌঁছনো যায় শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচন আসলেই শাসক বা বিরোধী নেতা-নেত্রীদের সমাগম ঘটে গ্রামে। কাঠের ভাঙা সেতু কংক্রিটের হবে, বাড়ি বাড়ি মিলবে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল, কংক্রিটের রাস্তা হবে, সীমান্ত এলাকার মানুষদের যাতে কাঁটাতারের ওপারে নো ম্যানস ল্যান্ডে চাষের কাজ করে সীমান্তরক্ষীদের বাধার মুখে পড়তে না হয় তা দেখা— মেলে এমন নানা প্রতিশ্রুতি। সীমান্তে পাচার বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দেন সকলে। বিলবল্লি সংস্কার করে মাছ চাষের প্রকল্প তৈরি, কর্মসংস্থান— এ সব বহু বছরের শোনা প্রতিশ্রুতি এখানকার মানুষের।

Advertisement

স্বরূপনগর ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন সমস্যা অবশ্য কোনওটাই মেটেনি বলে অভিযোগ।

দীর্ঘ দিন ধরে আবেদন-নিবেদন করার পরেও তেঁতুলিয়া সেতুর কোনও বিকল্প সেতু করা হল না। গত তিন বছর আগে স্থানীয় ভেকুটিয়া এলাকায় ইছামতীর উপরে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেঙে পড়ে সেটি। এখন আজও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বসিরহাট এবং বনগাঁ মহকুমার সংযোগস্থল তরণীপুর এবং গোপালপুরের মধ্যে কংক্রিটের সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। ভোটের সময়ে কংক্রিটের সেতু করার প্রতিশ্রুতি মেলে। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাঠের সাঁকো মিললেও একই সময়ে একটির বেশি চার চাকার গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না সেখান দিয়ে। তা-ও আবার মেরামতির অভাবে সেই সেতুর মাঝে মাঝে কাঠের পাটাতন উঠে গিয়ে ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।

কমল মণ্ডল, রত্না সাহা, ফজের আলি বৈদ্যরা জানান, বাম সরকারের আমলে তরণীপুর এবং গোপালপুরের মধ্যে কংক্রিটের সেতুর জন্য ১১ কোটি টাকার অনুমোদন মেলে। ডান-বাম সব দলের পক্ষে একাধিকবার ওই জায়গায় কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জন্য শিলান্যাসও করা হয়। কিন্তু সেতুর কাজ শুরু হয়নি। বাম আমলে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব। ক্ষমতায় এসে তৃণমূলের পক্ষে ওই প্রকল্প শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা শুরুই হয়নি। সীমান্ত দিয়ে বন্ধ হয়নি পাচারও।

গত দশ বছরে এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা (গ্রামীণ) সম্পাদক তথা স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় সাদা-নীল রং ছাড়া স্বরূপনগরে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ে না। সীমান্তবর্তী বালতি-নিত্যানন্দকাটি পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে প্রবাহিত সোনাই নদীর উপরে কংক্রিটের সেতুটি ২০১৮ সালের পর থেকে দুর্বল হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।

ফলে ওই সেতুর উপর দিয়ে চার চাকার যান চলাচল বন্ধ। এলাকার ৮টি গ্রামের মানুষ এক রকম বন্দিদশা কাটান। অথচ সংশ্লিষ্ট দফতর, বিধায়ককে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।’’ মুজিবরের কথায়, ‘‘তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ড, শ্মশান সহ বিভিন্ন এলাকায় হাইমাস্ট আলো লাগানো হয়েছিল। দু’মাসের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।’’ সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য রকিব সাহাজি বলেন, ‘‘সেতু ভেঙে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। আনাজ, ফসল রক্ষায় হিমঘর হয়নি। নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিতে গ্রাম ভাসে।’’ তিনি জানান, মাছ চাষের বাহানায় বিলবল্লি গরিব মানুষের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘর তৈরি এবং আমপানের টাকা নিয়ে কাটমানির নালিশও আছে।

সব অভিযোগই অবশ্য মিথ্যা বলে দাবি করে বিদায়ী বিধায়ক বীণা মণ্ডল বলেন, ‘‘বিরোধীরা যতই বদনাম করুক না কেন, এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা, পার্ক, শ্মশান, কবরস্থান, স্কুলে স্কুলে মাল্টি জিম, আলো, ক্লাবগুলিতে খেলার সরঞ্জাম, যাত্রী ছাউনি, গভীর নলকূপ এ সব হয়েছে। কলেজ ও হাসপাতালে জেনারেটর, অ্যাম্বুল্যান্স এসেছে। নিকাশি নালা হয়েছে। খাল সংস্কার হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement