সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপদের মুখে, অভিযোগ নানা মহলে
Mangrove

প্লাস্টিক পড়ছে নদীতে

আমপানের পর থেকে বেসরকারি ত্রাণের হাত ধরে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ঢুকেছে এলাকায়।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৩৬
Share:

বিপজ্জনক: কালীতলা ঘাটের কাছে নদীর চরে প্লাস্টিক। নিজস্ব চিত্র।

হাতে হাতে ঘুরছে প্লাস্টিক। প্রশাসন উদাসীন। জনতাও নির্বিকার। সঙ্গে আছে থার্মোকলের ব্যবহার। নদীর জলে গিয়ে পড়ছে সে সব।

Advertisement

সুন্দরবন ঘেঁষা কালীতলা পঞ্চায়েতের সামশেরনগর, কালীতলা বাজার এলাকায় দোকানদারেরা প্লাস্টিকের ব্যাগেই মালপত্র দেন। দু’হাত ভরে সে সব নিযেও যান ক্রেতা। কাজ ফুরোলে যত্রতত্র ফেলে রাখেন সকলে। কালীতলা খেয়াঘাটের পাশেই নদীর চরে দেখা গেল, প্লাস্টিকের বর্জ্য পড়ে আছে। কালীতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমাদের কেউ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বা বন্ধ করতে বলেনি। মাঝে মাঝে পঞ্চায়েত থেকে এসে বাজার সাফ করে। প্লাস্টিক বর্জ্য তুলে নদীর চরে ফেলতে দেখেছি। সেটাই আবার জোয়ারের জলে নদীতে ভাসতে থাকে।’’ দোকানদারেও অনেকে নদীর চরে প্লাস্টিক-বর্জ্য ফেলেন। তাঁদের অনেকে জানালেন, কখনও সখনও বন দফতর থেকে বারণ করে বটে, তবে সে কথা কেউ তত কানে তোলেন না। কোনও ডাস্টবিনও যেহেতু বাজারে নেই, কাজেই নদীর চরেই আবর্জনা ফেলা এখানকার দস্তুর।

সামশেরনগর এলাকাতেও প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচুর। জঙ্গলের পাশে যে নদী, তার চরে ফেলা হয় প্লাস্টিক-বর্জ্য। এই এলাকায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের কর্ণধার প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বা থার্মোকলের থালা ব্যবহার নিয়ে এখানে কোনও সতর্কতাই নেই। আমরা স্থানীয় ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিছু জায়গায় ডাস্টবিন বসিয়েছি। প্লাস্টিক সাফ করার চেষ্টা করি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’’ কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত এই বিষয়ে বৈঠক ডেকেছি।’’

Advertisement

যোগেশগঞ্জ, দুলদুলি বাজার এলাকাতেও একই ছবি। দুলদুলি পঞ্চায়েতের নেবুখালি, ভান্ডারখালি বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকানে প্লাস্টিকের কাপে চা দেওয়া হয়। কাপের স্তূপ নদীর চরে পড়ে থাকে। নেবুখালিতে কয়েকটি ছোট হোটেল আছে। সেখানে থার্মোকলের থালা ব্যবহার হয়। সে সবও জমে নদীর পাড়ে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক জুড়ে বেশির ভাগ রাস্তার মোড়ে বা বাজার এলাকায় ডাস্টবিন রাখার চলই কার্যত নেই। যদিও ব্লক প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় ডাস্টবিন রাখা হয়েছিল। তবে তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

আমপানের পর থেকে বেসরকারি ত্রাণের হাত ধরে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ঢুকেছে এলাকায়। কয়েক মাস ধরে মিড ডে মিলের জন্যও স্কুল থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেটে মালপত্র যাচ্ছে ছেলেমেেয়দের বাড়িতে। স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা জানি পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। একবার পরিবেশ-বান্ধব প্যাকেট করেছিলাম। কিন্তু তাতে এত খরচ হয়েছে যে আর ব্যবহার করতে পারছি না। তবে চেষ্টা করছি পরিবেশ-বান্ধব কিছু প্যাকেট ব্যবহার করার।’’

পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নদীর চরে এ ভাবে প্লাস্টিক বা থার্মোকল পড়ে থাকা বিপজ্জনক। এই বর্জ্য জোয়ারে নদীতে গিয়ে মেশে। প্লাস্টিকগুলি অতি ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে জলে ভাসে। সেগুলো খাবারের সঙ্গে মাছের পেটে ঢুকে তাদের মৃত্যু ঘটাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ওই মাছ মানুষ খেলে মানবদেহেও প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র কণা জমে বিপদ ডেকে আনে।’’ তিনি আরও জানান, ম্যানগ্রোভের যে শ্বাসমূল থাকে, তাতে এই প্লাস্টিক বা থার্মোকল জড়িয়ে থাকার ফলে গাছের বৃদ্ধি বাধা পায়। ম্যানগ্রোভ ধ্বংসও হতে পারে। আর ম্যানগ্রোভের ক্ষতি সামগ্রিক ভাবে সুন্দরবনের পক্ষেই বিপজ্জনক।

সায়েন্স কমিউনিকেটর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ বর্ধন বলেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে সরকারকে। অতি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে।’’ হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অর্চনা মৃধা বলেন, ‘‘করোনা আর আমপান পরিস্থিতি সামাল দিতে খুবই ব্যস্ত ছিল ব্লক প্রশাসন। তবে এ বার আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন