এঁদো জলে হাঁড়ি চড়ান সাবিনারা

বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ট্যাপ কল। কিন্তু তাতে বেশিরভাগ সময়েই জল আসে না।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০২:৩১
Share:

শুকনো-মুখে: দীর্ঘদিন ধরে ট্যাপ কলে জল নেই। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ট্যাপ কল। কিন্তু তাতে বেশিরভাগ সময়েই জল আসে না।

Advertisement

নেতাজি পঞ্চায়েতের মানিকঠাকুরচক গ্রামের বধূ সাবিনা মোল্লাকে তাই বেশিরভাগ দিনই রান্না করতে হচ্ছে পুকুরের জলে। পরিকাঠামো থাকলেও জলের সরবরাহ নেই এই এলাকায়।

কেবল নেতাজিই নয়, গরম কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে জলের হাহাকার। সরকারি তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, জলের সমস্যা নিয়মিত ভাবে হয় না।

Advertisement

কাকদ্বীপের নেতাজি পঞ্চায়েতের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা বহু দিনের। জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পাইপলাইন, ট্যাপকল— সবই আছে। কিন্তু জল আসে না, এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সাবিনার কথায়, ‘‘দিনের মধ্যে একবার জল দেওয়ার কথা। কিন্তু তা-ও কখন আসে, কখন আসে না ঠিক নেই। অত দূর গিয়ে আবার খালি হাতে ফিরে আসার চেয়ে পুকুরের জল ছেঁকে নিয়ে রান্না করাই ভাল।’’ পানীয় জলের জন্য রোজই এ দিক ও দিক থেকে চালু টিউবওয়েল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয় মানুষকে।

এই সমস্যা কেবল একা সাবিনার নয়, এলাকার অনেক মহিলারই এই অবস্থা। রামচন্দ্রনগর মৌজায় পানীয় জলের সরবরাহ নিয়ে সকলেই ক্ষুব্ধ। পাকুরতলা, ডোবারচক, বেজপুকুর মানিকঠাকুরচক, সোদপুকুর, উত্তর ও দক্ষিণ রামচন্দ্রনগরের প্রায় ৭ হাজার মানুষের জন্য অন্তত ২৮টি ট্যাপকল রয়েছে এলাকায়। কিন্তু জল আসে না।

মানিকঠাকুরচক এলাকায় গিয়েও একই ছবি দেখা গেল। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে টিউবওয়েলও রয়েছে। কিন্তু তারমধ্যেও অনেকগুলি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে বলে জানালেন এলাকার মানুষজন।

নামখানা নারায়ণপুর মৌজায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র-লাগোয়া জলের প্রকল্প দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে চারটি বুথের অন্তত ৪ হাজার পরিবারকে পানীয় জল নিয়ে নিয়মিত ভাবে ভুগতে হচ্ছে। হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর উপরে সেতু তৈরির জন্য খোঁড়াখুঁড়িতে পাইপ নষ্ট হয়েছিল ২০১৫ সালে। তা সারানো হয়নি এখনও। বুথ নম্বর ২৩৯, ২৪৪, ২৪৩ এবং ২৪৯ এলাকায় বিকল্প টিউবওয়েলের ব্যবস্থা থাকলেও প্রায় বহু টিউবওয়েল দিনের পর দিন খারাপ হয়ে পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। একই অবস্থা ঈশ্বরীপুর এবং গণেশনগর ঘোলাপাড়ায়।

মৌসুনির বালিয়াড়া মৌজায় জলের সমস্যা তীব্রতর। বেশিরভাগ সময়ে কোটালের জলে এলাকা ডুবে থাকে। তাই টিউবওয়েল থেকে যে জল বের হয়, তার বেশিরভাগই নোনা। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই এই জল দিনের পর দিন খেয়ে আসছেন তাঁরা।

এলাকার বাসিন্দা তথা বিরোধী দলনেতা শেখ ইলিয়াসের দাবি, এলাকায় সরকারি জলের সরবরাহ নেই। টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ২৫টা মতো। কিন্তু গরমে বেশ কয়েকটির জলস্তর নেমে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই এলাকায় মূল সমস্যা নদীবাঁধের তা না দিলে পরিষ্কার পানীয় জল পাওয়া মুশকিল।’’

গরমের সময়ই বেশিরভাগ টিউবওয়েলের জলে বালি আসে নামখানার উত্তর চন্দনপীড়ি এলাকায়। জলের স্তর নেমে যাওয়ায় এই বিপত্তি প্রতি গরমেই পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, টিউবওয়েল থেকে তোলা পানীয় জল তাঁদের ছেঁকে অথবা ফিল্টার করেই খেতে হয়। কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন