দেড় বিঘা জমির উপরে পুকুর। গবাদি পশুকে স্নান করানো হচ্ছে। চড়ে বেড়াচ্ছে হাঁস। সেই জলই আবার কলসি কাঁখে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মেয়ে-বৌরা। পানীয় জল হিসাবে ভরসা বলতে ওই পুকুরই!
এই পরিস্থিতি হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের চাঁড়ালখালি গ্রামে। কয়েক হাজার মানুষ বেঁচে আছে এই অস্বাস্থ্যকর জলের ভরসাতেই।
সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জেলাশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। এরপরেই পরিদর্শনে আসেন হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুদীপ মণ্ডল, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাসনাবাদের সহকারী বাস্তুকার শ্রীরাজ চক্রবর্তী।
গ্রামে প্রায় হাজার তিনেক মানুষের বাস। এক সময়ে জমিদারদের কাছারিবাড়ির দেড় বিঘা জমিতে পুকুর কাটা হয়েছিল। মাটির নীচের জল অতিমাত্রায় লবণাক্ত ও আর্সেনিকে ভরা। সে কারণে কল পুঁতে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তা-ও জল মেলেনি। সে কারণে পুকুরের দূষিত জল খেয়েই কাটাতে হচ্ছে। বিডিও বলেন, ‘‘পুকুরের জলের দূষণ রুখতে পুকুর ঘিরে নেট, পাঁচিল জরুরি। তার চেষ্টা চলছে।’’
এক সময়ে মানুষ ওই জল ফুটিয়ে খেতেন। কিন্তু সব সময়ে তা সম্ভব নয়। পেটের রোগের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই, জানালেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু উপায়ই বা কী! গ্রামবাসীরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে পুকুরের পাশে চৌবাচ্চা করে তাতে নুড়ি পাথর ফেলে জল পরিস্রুত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেটিও এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। চৌবাচ্চা ভেঙে গিয়েছে।
কল্পনা মণ্ডল, খগেন কাহার, সুপ্রিয়া রায়রা বলেন, ‘‘সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের কথা খালি শুনেই গেলাম। কাজের কাজ আর দেখলাম না।’’ আয়লার পরে ফিল্টার খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখনও তা ঠিক হল না।
সভাপতি সুদীপবাবু জানালেন, পুকুর ঘিরে জল পানীয় যোগ্য করা হবে। পাশাপাশি গ্রামে উচুঁ ট্যাঙ্ক বসিয়ে জলের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। শ্রীরাজবাবু বলেন, ‘‘উচুঁ ট্যাঙ্ক করে জল ধরে রাখার পরে সেই জল পাইপের মাধ্যমে পানীয় হিসাবে সরবরাহ করা বেশ খরচ সাপেক্ষ। তবে যাতে মানুষ ওই পুকুরের জল খেতে পারেন, সে জন্য পুকুর ধারে রাখা ফিল্টারগুলি মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’