মনোরমা বিশ্বাস
নানা রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে চারপাশ। তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। গোটা বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়। একটি টেবিলের উপর বেশ বড় একটি কেক। পাশে ১০০ লেখা মোমবাতি!
যাকে ঘিরে এত আয়োজন তিনি বনগাঁর জয়ন্তীপুরের বাসিন্দা মনোরমা বিশ্বাস। এ বার ১০০ বছরে পড়লেন। তাই এ ভাবে তাঁর জন্মদিন পালন করলেন বাড়ির লোক। বয়স হয়ে গেলেও তিনি পরিবারের একজন। সেই বার্তা দিতেই এই আয়োজন। তা ছাড়া মনোরমাদেবীকে আনন্দ দিতেও চেয়েছিলেন তাঁরা।
তসরের সিল্ক শাড়ি আর গলায় রজনীগন্ধার মালা পরে কেক কাটলেন মনোরমাদেবী। বললেন, ‘‘সব মিলিয়ে পাঁচ প্রজন্ম কাটিয়ে দিলাম। আগে তো আর এত সব ছিল না। এখন বেশ ভাল লাগছে।’’ পরিবারের লোকজন জানালেন, এখন মাঝে মধ্যেই শুনি বয়স্ক বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। প্রয়োজনে তাঁদের দিয়ে ঘরের কাজ করাচ্ছেন। যা একেবারেই উচিত নয়। সমাজে তাঁদের মূল্যই বেশি। সমাজ যদি এই বার্তা বোঝে, তাহলেই তাঁদের এই প্রয়াস সফল হবে।
পরিবারের দাবি, মনোরমাদেবীর প্রকৃত বয়স একশো ছাড়িয়েছে। তাঁর বড় ছেলে জিতেন্দ্রবাবুরই এখন ৮৪ বছর। এই প্রথম মনোরমাদেবীর জন্মদিন পালন করা হল। অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার ফরিদকাটি এলাকায় জন্ম মনোরমাদেবীর। ছোট বেলায় বিয়ে।
বৃদ্ধার তিন ছেলে। নাতি-নাতনির সংখ্যা ১১ জন। পুতি-পুতিনের সংখ্যা ১৬। ভরা সংসারের এখনও মাথা মনোরমাদেবী। লাঠি ছাড়াই হাঁটতে পারেন তিনি। রোজ নিয়ম করে এক কিলোমিটার হাঁটেনও। বলেন, ‘‘হাঁটলে শরীর সুস্থ থাকে।’’ চোখেও পরিষ্কার দেখতে পান। শুধু হাঁটা নয় বাড়িতে নিজে হাতে লাউ কুমড়ো মেটে আলু, বেগুন চাষও করেন।
জন্মদিনের কথা জিজ্ঞাসা করতেই, ‘‘তখন কি আর এ সব ছিল? ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের জন্য এত সুন্দর একটা দিন দেখলাম।’’ বলতে বলতেই চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল মনোরমাদেবী।