জটিল অস্ত্রোপচারে রক্ষা পেল গর্ভস্থ ভ্রূণ 

পেটে অসহ্য ব্যথা। দু’মাস ধরে ঋতুস্রাবও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গাইঘাটার কুলঝুটি এলাকার রূপালি ঢালির। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বছর একত্রিশের ওই বধূ। 

Advertisement

 নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৩
Share:

সফল: চিকিৎসকের সঙ্গে রূপালি। নিজস্ব চিত্র

পেটে অসহ্য ব্যথা। দু’মাস ধরে ঋতুস্রাবও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গাইঘাটার কুলঝুটি এলাকার রূপালি ঢালির। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বছর একত্রিশের ওই বধূ।

Advertisement

২৩ সেপ্টেম্বর মহিলা শল্য বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরে চিকিৎসক মহীতোষ মণ্ডল প্রেগন্যান্সি টেস্ট ও আলট্রা সনোগ্রাফি করান। দেখা যায়, রূপালি দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গর্ভে দু’টি ভ্রূণ রয়েছে। একটি জরায়ুর ভিতরে, অন্যটি বাইরে। হাসপাতালের বাইরে থেকে করানো ট্র্যান্স ভ্যাজাইন্যাল সনোগ্রাফি পরীক্ষাতেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ ভাবে এমন পরিস্থিতিতে কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ দেওয়া হয়। কারণ, জরায়ুর ভিতরে ও বাইরে ভ্রূণ থাকলে অস্ত্রোপচার করাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন ক্ষেত্রে ভ্রূণ বাঁচানোটাই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য পরিকাঠামোরও অভাব আছে।

Advertisement

কিন্তু অস্ত্রোপচার জরুরি। মহীতোষ বলেন, ‘‘জরায়ুর বাইরে থাকা ভ্রূণ থেকে সন্তান হয় না। বরং সেটি ফেটে গিয়ে জরায়ুর মধ্যে যে ভ্রূণ থাকে, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এমনকী, মায়েরও প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে। সে কারণে অস্ত্রোপচার করে জরায়ুর বাইরে থাকা ভ্রূণটি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’

চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেলেন মহিতোষ। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দারের সঙ্গে আলোচনা করেন। গোপাল তাঁকে পরামর্শ ও সাহস দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর মহীতোষ অস্ত্রোপচার করেন। আরও রোগিনীর জটিলতা দেখা দেয় অস্ত্রোপচারের টেবিলে।

ঘণ্টাখানেকের অস্ত্রোপচারে রূপালির জরায়ুর ভিতরে থাকা ভ্রূণটি বাচাঁতে সক্ষম হন চিকি‌ৎসক। কিন্তু তারপরে মহিলা জন্ডিসে আক্রান্ত হন। ভ্রূণটি বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকদের নতুন লড়াই শুরু করতে হয়।

আপাতত সম্পূর্ণ সুস্থ রূপালি। হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘এই ধরনের অস্ত্রোপচার খুবই জটিল। একটি ভ্রূণ বাঁচানোটা চ্যালেঞ্জের। মহীতোষ যে ভাবে সফল অস্ত্রোপচার করেছেন, তাতে আমরা খুবই খুশি।’’

সোমবার মহালয়ার সকালে প্রসূতি চিকিৎসক মহীতোষ, চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার ও সুপার ওয়ার্ডে গিয়ে রূপালিকে দেখে ছুটি দিয়েছেন। বাড়ি ফেরার আগে রূপালির চোখে জল। বললেন, ‘‘একটা সময়ে মনে হয়েছিল, এ বার হয় তো পুজো দেখা হবে না। চিকিৎসকদের চেষ্টায় নতুন জীবন পেলাম। মহালয়ার সকালে বাড়ি ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’

গোপাল বলেন, ‘‘সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মহিলাকে সব রকমের সাহায্য

করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement