জামাতের আমির (প্রধান) শফিকুর রহমান। — ফাইল চিত্র।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, প্রাথমিক ভাবে তাদের লক্ষ্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে জোট করা। একই সঙ্গে তারা কোন আসনে কেমন প্রার্থী দেবে, কোন কোন আসনকে নিজেদের জয়ের জন্য নিশানা করবে, সে বিষয়েও পরিকল্পনা নিতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের ভোট সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বিএনপি। তারেক রহমান দেশে ফেরার পরে বিএনপি-র পালে যে হাওয়া লেগেছে, সে বিষয়েও একপ্রকার নিশ্চিত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিএনপি যে সব আসনে শক্তিশালী, সেই সব আসনের থেকেও জামাত নেতৃত্ব বেশি করে নজর দিতে চান আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দাপট যে সব আসনে বেশি, তেমন জায়গায়। এ ছাড়াও বিএনপি যে সব এলাকায় কিছুটা কমজোরি, তেমন আসনগুলিও জামাতের নজরে থাকতে পারে বলে চর্চা চলছে। সব মিলিয়ে এমন দু’শোটি আসনের দিকে তাদের বিশেষ ভাবে নজর আছে বলেই ওই পর্যবেক্ষক মহলের দাবি।একটি সূত্রের মতে, ডাকসু, জাকসু নির্বাচনের মতো এই আসনগুলিতে জামাত আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির দুর্বল, দলছুট, অচেনা লোকজনকে টিকিট দিতে পারে বা নির্দল হিসাবেও দাঁড় করাতে পারে। বিএনপি-র বিদ্রোহী প্রার্থীরাও জামাতের নজরে রয়েছেন বলে খবর। তাঁদেরও প্রার্থী করতে পারে জামাত।
এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ প্রচলিত শব্দবন্ধ। জামাত জানে, এটা কী ভাবে করতে হয়। নাম প্রকাশ না-করার শর্তে ওই বিশ্লেষকের ব্যাখ্যা, ‘‘একটি আসনে গড়ে ১০০টির মতো ভোট কেন্দ্র থাকে। জামাত এর মধ্যে ৫০-৬০টি কেন্দ্রে টাকা ঢালবে।’’
ওই সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, প্রচারের ক্ষেত্রে জামাত যে ধর্মীয় ও ভারত-বিরোধী আওয়াজকে বেশি করে ব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? ইতিহাসের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘আগামী দিনে দীপু দাসের মতো ঘটনা যে আর ঘটবে না, তা কে বলতে পারে! ওই ঘটনাগুলি সংখ্যালঘুদের ত্রস্ত করলে, তাঁরা ভোট থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন। তাতে সুবিধা হবে জামাতের। সেই সঙ্গে ভারত-বিরোধী জিগির সপ্তমে উঠতে পারে।’’
মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভূমিকাও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক ভাল। আবার তারেক দেশে ফিরে ইউনূসকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, এই ভোটে অর্থের ব্যবহার হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কোন দলের সম্পদ কত, কত অর্থ তারা সংগ্রহ করছে এবং কী ভাবে তা ভোটের জন্য খরচ করছে— এ গুলো নিয়েও চর্চা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের উপরেই বা কোন দলের প্রভাব বেশি, তা-ও রয়েছে চর্চায়। পর্যবেক্ষকদের একাংশের কথায়, সম্প্রতি প্রশাসন যে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ রাখছে, সেখানকার নেতৃত্বেরা কোনও দলের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে, সেই দল আর্থিক সুবিধা পেয়ে যেতে পারে। প্রশাসনের উপরে প্রভাবের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়।
পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, জামাতকে লড়তে হবে বিএনপির মতো পোড় খাওয়া এবং পুরনো একটি দলের সঙ্গে। যারা এর মধ্যে ক্ষমতায় থেকেছে। বিএনপি নেতৃত্ব জানেন, কোন কোন দিক থেকে অর্থ ও প্রশাসনিক কাঠামোকে অন্যেরা ব্যবহার করতে পারে। সে দিকে তাঁরা সতর্ক নজর রাখবেন বলেই আশা করা যায়। ওই অংশের কথায়, আবার পালাবদলের পরে বাংলাদেশে জামাত যে আলাদা গুরুত্ব পাওয়ার মতো শক্তি, সেটাও ঠিক।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে