ইঞ্জিন ভ্যানও পুলকার, ঝুঁকি নিয়েই স্কুলের পথে পড়ুয়ারা

একখানা ইঞ্জিন ভ্যান। তারই চারপাশে কয়েকটা তক্তা সাঁটানো। এবড়োখেবড়ো সেই তক্তাগুলোর মধ্যে তারের জাল লাগানো। মাঝখানে জুবুথুবু হয়ে বসে কয়েকটা বাচ্চা, চলেছে স্কুলে।

Advertisement

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

প্রাণ হাতে নিয়েই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।

একখানা ইঞ্জিন ভ্যান। তারই চারপাশে কয়েকটা তক্তা সাঁটানো। এবড়োখেবড়ো সেই তক্তাগুলোর মধ্যে তারের জাল লাগানো। মাঝখানে জুবুথুবু হয়ে বসে কয়েকটা বাচ্চা, চলেছে স্কুলে।

Advertisement

শহর কিংবা শহরতলির বাস, ছোট গাড়ি নয়— মফস্‌সলে এই হল ছোটদের পুলকার। কখন উল্টে পড়বে, কখন দুর্ঘটনা ঘটাবে— কেউ জানে না। রিকশাকেও ব্যবহার করা হচ্ছে এ ভাবে পুলকার বানিয়ে। শহর কলকাতায় একের পর এক পুলকার দুর্ঘটনার পরে সেখানেও বিশেষ টনক নড়েনি পুলিশ-প্রশাসনের। আর কলকাতা থেকে দূরবর্তী ক্যানিং মহকুমায় কে আর নজর দেবে এই অবৈজ্ঞানিক যাতায়াতের মাধ্যমের দিকে!

মহকুমার ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবার বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি স্কুলে এ ভাবেই যাতায়াত করছে খুদে পড়ুয়ারা। স্কুলগুলির নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই। ফলে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকদের ভরসা ওই সব বেআইনি পুলকার।

Advertisement

অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলের নিজস্ব গাড়ি না থাকার ফলেই নানা কারণে তাঁরা এ ভাবে পাঠাতে বাধ্য হন বাচ্চাদের। কিন্তু যে ভাবে সেখানে গাদাগাদি করে ছেলেমেয়েদের তোলা হয়, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ দিকে প্রশাসনের নজরই নেই। অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে গেলে পুলকার মালিকেরা পাত্তাই দেন না। বেশি ট্যাঁ ফুঁ করলে ওই সব পরিবারের বাচ্চাদের আর নিতেই চায় না তারা। অন্য গাড়ি দেখে নিতে বলে।

অভিভাবকেরা অনেকে জানালেন, ছোট গাড়ির পুলকারগুলিতে বাচ্চাদের মাথা-পিছু দুরত্ব অনুযায়ী মাসে ১০০০-১৫০০ টাকা নেওয়া হয়। ভ্যানো বা রিকশায় যে সব পুলকার চলে, তাদের খরচ অনেক কম। মাসে ২৫০-৩০০ টাকা।

কিন্তু আশঙ্কার কথা হল, যে ভাবে বাচ্চাদের খাঁচাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে গাড়ি উল্টে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বাচ্চারা কোনও ভাবে বেরোতেও পারবে না। তাতে বিপদের আশঙ্কা আরও বেশি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বৈধ অনুমতি ছাড়া এমন কোনও গাড়িকে পুলকার হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। প্রতি বছর গাড়িগুলির ফিটনেস পরীক্ষা করার নিয়ম আছে। গাড়িতে ফাস্ট এইড বক্স রাখা বাধ্যতামূলক, মদ্যপ অবস্থায় কেউ গাড়ি চালাচ্ছে কিনা, তা-ও দেখার কথা। কিন্তু গ্রামীণ এই সব এলাকায় সে সব নজরদারির কথা কেউ মাথাতেও রাখে না।

ক্যানিঙের এক অভিভাবিকা সৈয়দ ফাহিন আখতার বলেন, ‘‘বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোটা একটা বড় সমস্যার বিষয়। প্রতিদিন বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। স্কুলগুলিরও নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। বাধ্য হয়ে পুলকারে দিতে হয়েছে। কিন্তু যে ভাবে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে ভয়ে ভয়ে থাকি।’’

ক্যানিঙের এক পুলকার গাড়ির মালিক তপন জানা বলেন, ‘‘আমার একটা গাড়ি অভিভাবকদের অনুরোধে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য পুলকার হিসাবে চলে। ১৪ আসনের ওই গাড়িতে সারা মাস ভাড়া খাটিয়ে যে টাকা ওঠে, তাতে লাভ হয় না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত কিছু বাচ্চাকে নিয়ে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হয়।’’

ক্যানিঙের এসডিপিও সৌম্য রায় বলেন, ‘‘পুলকার নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি থাকে।

তবে পুলিশ আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, ভ্যানো বা অন্য ছোট গাড়িতে ঠেসাঠেসি করে বাচ্চাদের স্কুলে না পাঠানোর ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। না হলে অবৈধ এই কারবারে পুরোপুরি রাশ টানা শক্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement