ভাঙন ঠেকাতে এর আগে অনেক টোটকা প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।
গত এক বছরে ১০০ মিটার ধস নেমেছে গঙ্গাসাগর উপকূলে। ঢেউ ঠেকানোর গার্ডওয়াল, রাস্তার প্রান্ত ভেঙে বিক্ষিপ্ত ভাবে বেরিয়ে পড়েছে ইট, কংক্রিট। ঘটছে দুর্ঘটনা।
গঙ্গাসাগর মেলার তিনমাস আগে সাগরের এই অবস্থা হওয়ায় চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন। কারণ, এখনও কোনও আশু সমাধান প্রশাসনের হাতে নেই। সমুদ্র বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ বার এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, মহালয়ার আগেই উপকূলের একটি বিদ্যুতের খুঁটি হঠাৎই আলগা হয়ে পড়ে যায়। তাতে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন দু’জন। অনেক ক্ষেত্রেই খুঁটিগুলি হেলে গিয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ প্রশাসনের তরফে করা হয়নি।
সমস্যা দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশেরও। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মানস প্রামাণিকের কথায়, ‘‘সমুদ্রের তোড়ে ক্রমাগত পাড় ভেঙে এগিয়ে আসছে ঢেউ। ২ নম্বর রাস্তার উপকূলের দিকে একেবারে শেষ প্রান্তে দু’একটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে অনেক দোকানিকেই এলাকা ছাড়তে হবে।’’
উপকূলের পশ্চিম দিকে কাঠের কটেজের সামনে থেকে শুরু করে পূর্বে ঝাউবন পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার লম্বা উপকূল বরাবর অন্তত ১০০ মিটার পাড় ধসে গিয়েছে গত এক বছরে। সাগর ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের বছর গঙ্গাসাগর মেলার আগে দু’নম্বর রাস্তার শেষে উপকূলে কংক্রিটের একটি গার্ডওয়াল দেওয়া হয়েছিল। তা-ও ভেঙে গিয়েছে। আশ্রম থেকে সমুদ্রে নামার পথে মূল ওই রাস্তার মুখে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে ইটের টুকরো।
পুজোর আগে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রিভিউ বৈঠক করে ডিভিশন্যাল কমিশনার সেচ দফতরের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টি নিয়ে একটি সমাধান খুঁজে বের করার। কাকদ্বীপের দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা জানি। ডিজাইন উইং নামে আমাদের একটি বিশেষ শাখা রয়েছে। তাঁদের কাছে বিষয়টি শীঘ্রই তুলে ধরা হবে, যাতে এর একটি সমাধান বের করা সম্ভব হয়।’’ ওই শাখার ইঞ্জিনিয়ারদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা।
গঙ্গাসাগর সৈকত জুড়ে এখন কেবল ভগ্নস্তূপ। কোটালের ক্রমাগত চাপে এগিয়ে এসে সমুদ্র একটু করে গ্রাস করে চলেছে। ঝাউবনের অনেকটাই এখন সমুদ্রের মধ্যে চলে গিয়েছে। নারকেল বাগান বিপজ্জনক ভাবে হেলে রয়েছে।
তবে ভাঙনের জন্য জোড়াতালি দেওয়া কোনও টোটকা কাজে লাগবে না বলেই মনে করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞ সুগত হাজরা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত সমুদ্র স্রোতের কারণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাঙনের মাত্রা প্রচণ্ড বেশি।
তার উপরে বঙ্গোপসাগর এবং সুন্দরবন এলাকায় সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ার হার বছরে প্রায় ৮ মিলিমিটারের কাছাকাছি। তাই কপিল মুনির মন্দির এবং তীর্থক্ষেত্র বাঁচাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন।’’ তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিকল্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরে দেওয়াল তুলে দিতে পারলে ঢেউয়ের হাত থেকে গঙ্গাসাগর বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে সুনামির হাত থেকে বাঁচতে উপকূল বরাবর সমুদ্রের মধ্যে এ রকম লম্বা ফোল্ডিং দেওয়াল তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। খারাপ আবহাওয়া থাকলে তা তুলে দিয়ে ঢেউয়ের হাত থেকে উপকূল বাঁচানোই যার লক্ষ্য।
গঙ্গাসাগরের পাশ দিয়েই রয়েছে বিজনেস চ্যানেল। সেখান দিয়েই যাবতীয় জাহাজ চলাচল করে খিদিরপুরের দিকে। সেখানে এ রকম কোনও স্থায়ী সমাধান কার্যত সম্ভব না-ও হতে পারে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা।
সমুদ্রের আরও কাছে থাকায় দু’বার পিছিয়ে এনে কপিল মুনির বর্তমান মন্দিরের কাঠামো তৈরি করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই তীর্থক্ষেত্র বাঁচানোর চিন্তায় চাপ বাড়ছে প্রশাসনের।