হতাশ চাষিরা। নিজস্ব চিত্র।
আমপানের জেরে কোথাও বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে নদীর জল ঢুকেছিল চাষের জমিতে। বিঘার পর বিঘা ধানি জমিতে নোনা জল ঢুকে চাষিদের মাথায় হাত। কৃষি দফতর এগিয়ে আসে সাহায্যে। বিশেষ প্রজাতির ধানের বীজ দেওয়া হয় চাষিদের। নোনা জমিতেও যে বীজ ভাল ফলন দেবে বলে চাষিদের আশ্বস্ত করেন কৃষি কর্তারা।
কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। সেই বিশেষ প্রজাতির বীজে আদৌ ফলন ভাল হয়নি। যে জমিতে ১০ বস্তা ধান হত, সেখানে হয় তো মেরেকেটে পাওয়া যাবে ২ বস্তা। এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত চাষিদের। কেউ কেউ খরচ করে ফসল কেটে ঘরে তুলবেন না বলেই জানিয়েছেন। যাঁরা উন্নতমানের বীজ কিনে ওই জমিতে চাষ হবে ভেবেছিলেন, তাঁরাও হতাশ।
বাজার থেকে বেশি দামে কেনা বীজেও ফলন একেবারেই ভাল হয়নি বলে জানাচ্ছেন চাষিরা।
এই অবস্থা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি ও বিশপুর পঞ্চায়েতের আমপান প্লাবিত চাষের জমির। রূপমারি পঞ্চায়েতের ৫টি গ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আমপানে। এই পঞ্চায়েতের প্রায় ৬ হাজার বিঘা চাষের জমিতে নদীর জল জমে।
এই সব এলাকার চাষিদের পরবর্তী সময়ে সরকারি ভাবে বিশেষ প্রজাতির ধানের বীজ দিয়ে সাহায্য করা হয়েছিল। অনেকে নিজেরাও বাইরে থেকে বেশি দাম দিয়ে বিশেষ প্রজাতির বীজ কেনেন। সব মিলিয়ে বিঘে পিছু প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। স্বাভাবিক ফলনই আশা করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু পরিস্থিতি বলছে অন্য কথা।
হিঙ্গলগঞ্জের ব্লক কৃষি দফতর সূত্রের খবর, প্রায় ২৫ হাজার কৃষককে ৩৫ টন বীজ দেওয়া হয়। ফলন না হওয়ার পিছনে আবহাওয়া একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন দফতরের আধিকারিকেরা। এ ছাড়া, অনেককে ১৪০ দিন পরে ধান কাটতে বলা হলেও তাঁরা নানা কারণে কাটতে পারেননি। মাটির সমস্যাও ছিল বলে দফতর সূত্রের খবর।
ধানিখালি, পশ্চিম খেজুরবেড়িয়া, বাইনারা এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কোনও কোনও জমিতে ধান গাছ মরে গিয়ে জায়গায় জায়গায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আর যে সব গাছ দাঁড়িয়ে আছে, সেই সব গাছে ভাল ধান হয়নি। জমির মালিক বিমল মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের ৯ বিঘা জমি রয়েছে। সরকারি বিশেষ ধানের বীজ নিয়ে ও নিজে কিছু কিনে চাষ করেছিলাম। ৯ বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন যা অবস্থা, ধান কাটবো না ভাবছি। কারণ, যে সামান্য ধান পাব, তা বাড়ি পর্যন্ত আনতে আরও খরচ হবে। খুব ক্ষতি হল চাষ করে।”
আর এক কৃষক নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার বাড়ি-ঘর সব ভেসে গিয়েছিল আমপানের রাতে। খুব কষ্টে তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্তু সরকারি বীজের চাষে এক বিঘা জমিতে এক বস্তা ধানও ফলেনি। অথচ, কোনও বছর এক বিঘে জমিতে ১০ বস্তার কমে ধান হয় না। চাষের খরচটুকু উঠল না।” উষারানি দাস নামে এক মহিলা জানান, তাঁদের ৯ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। কয়েক বিঘা জমির ধান কেটে দেখা গিয়েছে, বিঘে প্রতি এক বস্তা করেও ধান হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কণিকা দাস মণ্ডল বলেন, ‘‘প্লাবিত এলাকার জমিতে ধান চাষ করার জন্য সরকারি বিশেষ বীজধান দেওয়া হয়েছিল কৃষকদের। তবে চাষ করে কোনও লাভ হল না। ওই জমিতে ডাল বা সর্ষে চাষ এ বছর কেউ করতে চাইছেন না। তাই সরকারি ডাল বা সর্ষের বীজ কেউ আর নিতে চাইছেন না। তবে আমরা কৃষকদের পাশে আছি।”
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক কৃষি সহঅধিকর্তা মৈনাক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কৃষকরা সকলে বাংলা শস্যবিমা যোজনার আওতায় আছেন। তাই ইতিমধ্যে অনেকে ফসলের সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছেন। যাঁরা পাননি, তাঁরা দ্রুত পাবেন।”