Diamond Harbour

‘হঠাৎ দেখি লোকটাকে ওরা কোপাচ্ছে’

এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। তাঁরা জানালেন, মহিলা কামরায় মাঝে মধ্যে পুলিশ পাহারা থাকলেও সাধারণ কামরায় পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০১
Share:

জখম মসিয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

চলন্ত ট্রেনের কামরায় এক যুবককে কুপিয়ে জখম করল দুষ্কৃতীরা। গুলি চালানোরও চেষ্টা করে। যাত্রীরা বাধা দেন। ধরা পড়ে যায় এক দুষ্কৃতী।

Advertisement

রবিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের আপ শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার লোকালে, দেউলা স্টেশনের কাছের ঘটনা। জখম মসিয়ার জমাদারকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। পরে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘ট্রেন সবে চলতে শুরু করেছিল। একটু গুছিয়ে বসছি। হঠাৎ একটা আর্তনাদ। দেখি, উল্টো দিকের সিটে বসে থাকা এক যুবককে কয়েকজন মিলে কোপাচ্ছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। আমরা ঘাবড়ে যাই। চেন টেনে ট্রেন থামাবো কি না ভাবছিলাম। তারই মধ্যে দেখলাম, কয়েকজন সহযাত্রী উঠে গিয়ে ওই যুবকদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তা দেখে মনে একটু বল পেলাম। কিন্তু এরপরে ফাঁকা ট্রেনে উঠতে রীতিমতো ভয় করবে। জানি না, কবে এই আতঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পাব!’’

Advertisement

এই ঘটনায় নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। তাঁরা জানালেন, মহিলা কামরায় মাঝে মধ্যে পুলিশ পাহারা থাকলেও সাধারণ কামরায় পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না। রেল পুলিশের বক্তব্য, সব কামরায় পাহারা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই। তা সত্ত্বেও যতটা সম্ভব নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশের মসিয়ারের বাড়ি মন্দিরবাজারের গৌড়জলা গ্রামে। কয়েক বছর ধরে নেতড়ার কাছে পশ্চিম কামালপুর গ্রামে সপরিবার আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন তিনি। গড়িয়ায় পুরনো জিনিসপত্রে কেনাবেচার দোকান আছে।

প্রতিদিন ভোরে নেতড়া স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী ৫টা ৪০ মিনিটের ট্রেন ধরেন। এদিনও বেরিয়েছিলেন। ট্রেন ছাড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পাঁচ দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায়, ঘাড়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে তারা। একজন আগ্নেয়াস্ত্র বের করে গুলি চালাতে যায়।

রবিবার, ছুটির দিন ভোরের ট্রেনে বেশি যাত্রী ছিলেন না। তাঁদেরই কয়েকজন বাধা দেন ওই দুষ্কৃতীকে। কয়েক মিনিট ধস্তাধস্তি চলে। নেতড়ার পরে দেউলা স্টেশনে ট্রেন ঢোকার মুখে গতি কমতেই লাফ দিয়ে নেমে পালায় দুষ্কৃতীরা। হামলাকারীদের দলে ছিল ইমরান গায়েন। তার পায়ের সমস্যা আছে। টানা দৌড়তে পারেনি। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে রক্তমাখা জামা পরে পালানোর সময়ে স্থানীয় মানুষ তাকে ধরে ফেলেন। পরে তুলে দেওয়া হয়েছে রেল পুলিশের হাতে। তার কাছ থেকে পুলিশ এক রাউন্ড কার্তুজ ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। ধৃতের বাড়ি মন্দিরবাজারের গৌড়জলা গ্রামে।

কেন হামলা, তা নিয়ে তদন্তকারীরা অন্ধকারে। মাস পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছে মসিয়ারের। তাঁর স্ত্রী হাসিমা খাতুন বলেন, ‘‘ওঁর কোনও শত্রু আছে বলে তো শুনিনি।’’ মসিয়ারের কাকা এমাদুল জমাদার জানান, গৌড়জলা গ্রামে বহু বছর আগে জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদ ছিল। তবে ১০-১২ বছর ধরে মসিয়ার গৌড়জলায় থাকে না। কী কারণে তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হল, জানাতে পারেননি এমাদুলও। তবে এই ঘটনায় গৌড়জলার বাসিন্দা কয়েকজন জড়িত বলে তাঁর দাবি। সকলের নামে লিখিত অভিযোগ হয়েছে রেলপুলিশের কাছে। পুলিশ তদন্ত করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন