অভিযুক্ত: গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে। নিজস্ব িচত্র
কথায় কথায়, ‘জানো আমি কে?’— এই হুঙ্কার তার কাছ থেকে গত তিন বছরে বহুবার শুনেছেন অনেকে। জেনেছেন, তিনি নাকি জেলাশাসক। নীলবাতি লাগানো দামী এসইউভিতে যাতায়াত করেন। ঠাটবাঁট দেখে, কোন জেলার জেলাশাসক তিনি, সে প্রশ্ন করারই সাহসই পেতেন না পড়শিরা। দু’এক জন আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলেও উত্তর পাননি কখনও।
এ হেন মানুষটিই জালিয়াতি, প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় তাই তাজ্জব নৈহাটির গঙ্গার ধারের আবাসনের বাসিন্দারা।
তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই ব্যক্তি বছর তিনেক ধরে ওই আবাসনের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সপরিবার থাকত। পাড়ার বাসিন্দা তো নয়ই, আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গেও তেমন সদ্ভাব ছিল না তাপস ও তার পরিবারের। কৃষ্ণভক্ত বলে নিজেকে জাহির করত তাপস। বাড়িতে প্রায়ই গেরুয়া পোশাকের লোকজনকে ঢুকতে-বেরোতে দেখা যেত। তেমন কয়েক জনের সাধুর সঙ্গেই মঙ্গলবার দুপুরে গাড়ি করে বাড়ি ছাড়েন তাপসের স্ত্রী-মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরেশচন্দ্র পাল রোডের ওই আবাসনের চার তলায় প্রমোটারের একটি ফ্ল্যাট ছিল। বছর তিনেক আগে সেটি ভাড়া নেয় তাপস। মাঝে মধ্যে দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকত না। আবার কখনও কখনও টানা বাড়িতেই থাকত।
আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সব সময় নিজেকে জাহির করার একটা ব্যাপার ছিল ওঁর। পাড়ার বা আবাসনের পুজো-অনুষ্ঠানে চাঁদা চাইতে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হত।’’ তাপসের উত্তর ছিল, ‘‘আমি গোপালের ভক্ত। গোপালের পুজো ছাড়া কোনও অনুষ্ঠানে চাঁদা দিই না। আর গোপালের পুজোর চাঁদাও আমি দিই না। কারণ, ওই পুজো আমি বড় করে বাড়িতেই করি।’’ চাঁদা চেয়ে কেউ গলা তুলে ভারী গলায় প্রশ্ন আসত, ‘‘জানো আমি কে? আমাকে বেশি ঘাঁটিও না। আমার হাত যত উঁচুতে, তত উপরে তোমার নজরও যাবে না।’’
নিজের বাড়িতে গোপাল পুজো দু’বছর ধুমধামের সঙ্গেই করেছিল তাপস। আবাসনের সকলকে নিমন্ত্রণও করে। এলাহি ব্যাপার-স্যাপার দেখে আবাসনের বাসিন্দাদের ধারণা হয়েছিল, তাপস সত্যিই কোনও কেউকেটা। তব গত বছর আর গোপাল পুজো করতে পারেনি তাপস। আবাসনের লোকেরা আপত্তি জানান। ছাদে প্যান্ডেল করার জন্য দড়ি বেঁধে বাঁশ তোলা হত। আগের দু’বছরে সে জন্য দেওয়ালের ক্ষতি হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে, ফের শুনতে হয়েছিল— ‘‘জানো আমি কে?’’
তবে গত বার বাসিন্দাদের সমবেত বাধার মুখে ‘জেলাশাসক’ তাপস বিশেষ মুখ না খোলায় কারও কারও সন্দেহ দানা বাধে।