বাগদার মীন ধরা পড়ছে কম, সমস্যা সুন্দরবনের বহু মানুষ

সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে কমেছে বাগদার মীন। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে এই সমস্ত মীন ধরে জীবন যাপন করা মৎস্যজীবীরা। এখন জীবিকার তাগিদে তাঁদের পরিবার নিয়ে ছুটতে হচ্ছে ভিন রাজ্যে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারও সুন্দরবনের মানুষের বিকল্প জীবিকা কী হবে তার সঠিক দিশা দেখাতে পারেনি। কিছু জায়গায় অল্পবিস্তর মহিলাদের স্বনির্ভর করা হচ্ছে মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

বাসন্তীর হোগল নদীতে মীন ধরার কাজ চলছে। ছবি: সামসুল হুদা।

সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে কমেছে বাগদার মীন। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে এই সমস্ত মীন ধরে জীবন যাপন করা মৎস্যজীবীরা। এখন জীবিকার তাগিদে তাঁদের পরিবার নিয়ে ছুটতে হচ্ছে ভিন রাজ্যে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারও সুন্দরবনের মানুষের বিকল্প জীবিকা কী হবে তার সঠিক দিশা দেখাতে পারেনি। কিছু জায়গায় অল্পবিস্তর মহিলাদের স্বনির্ভর করা হচ্ছে মাত্র। এ বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের জন্য বাম আমলে সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মসূচি ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের সাবলম্বী করার চেষ্টা করেছি। রাজ্যে ফের কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে। সে কারণে এখানকার মানুষ আবার এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে।’’

Advertisement

বাগদার মীনের বড় বাজার ছিল বাসন্তীর সোনাখালি, গোসাবা, ক্যানিং, কুলতলি-সহ বিভিন্ন জায়গায়। বিভিন্ন এলাকায় মেছোভেড়ি মালিকেরাও এখান থেকে মীন কিনে বিক্রি করতেন। এ প্রসঙ্গে এক মীন ব্যবসায়ী তথা মেছোভেড়ির মালিক আক্রম লস্কর বলেন, ‘‘সুন্দরবনের মীন সমস্যার জন্য আমাদের ব্যবসারও সংকট দেখা দিয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে বাগদার মীন নিয়ে এসে মেছোভেড়ি বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

কেন এই অবস্থা?

Advertisement

সুন্দরবন মৎস্যজীবী রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুকান্ত সরকার বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের জালে বাগদা চিংড়ির মীন বেশি ধরা পড়াতে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বাগদার মীন ধরার সময় জালে ছোট ছোট মাছও ধরা পড়ে। ফলে মাছগুলি আর বড় হতে পারে না। মাছের বৃদ্ধি ঘটছে না। তা ছাড়া, বাসিন্দারা জানান, নদী মজে যাচ্ছে। এতে মাছের সংখ্যা কমছে।

সুন্দরবনের মাতলা, বিদ্যা-সহ বিভিন্ন নদীতে একসময় মিলত প্রচুর পরিমানে বাগদার মীন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে আয়লার পরে সংকট দেখা দিয়েছে এই মীনের। এর ফলে মীন ধরা মৎস্যজীবীদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই কারণে অনেকেই এখন শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ আবার কাজের সন্ধানে পরিবার নিয়েই চলে যাচ্ছেন কেরল, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, আন্দামানে। বাগদার মীন ধরার কাজে মহিলারাও পারদর্শী ছিলেন। একটি পরিবারের প্রায় তিন-চার জন সদস্য এক সঙ্গে নদী বা খাঁড়িতে মীন ধরতে যেতেন। তা থেকেই তাঁদের সংসার চলত।

গৌর সর্দার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বাগদার মীন আগে বাংলাদেশে যেত। ভাল বাজার ছিল। দামও পাওয়া যেত ভাল। কিন্তু এখন আর তা হয় না। ফলে আমাদের আয় কমে যাচ্ছে।’’ গোসাবার সাতবেড়িয়া গ্রামের এক মহিলা ববিতা নস্কর বলেন, ‘‘বাগদার মীন না পাওয়া যাওয়ায় জঙ্গলে যেতে হয় কাঁকড়া ধরতে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয় না। মীন ধরে যে টাকা পাওয়া যেত। এখন আর সেই রোজগার হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন