দাউদাউ: দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কাছে জ্বলছে সেই বস্তি। আহত বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী (ইনসেটে)। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণেশ্বর মন্দির লাগোয়া বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে গেল ৫০টি ঝুপড়ি। খবর পেয়ে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বালি সেতুর দক্ষিণেশ্বরমুখী অংশটি বন্ধ রাখতে হয়।
দমকল ও পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ খবর আসে বালি সেতুর দক্ষিণেশ্বরমুখী ঢালের বস্তিতে আগুন লেগেছে। সেখানে রয়েছে প্রায় তিনশোটি ঘর। সব ক’টিই মাটি এবং দরমা দিয়ে তৈরি হলেও প্লাস্টিকের ছাউনি থাকায় আগুন কয়েক মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বলে দমকল সূত্রের খবর।
প্রাথমিক ভাবে দমকলের অনুমান, রান্না করার সময়ে কোনও ভাবে গ্যাস লিক করে। তা থেকেই আগুন লাগে। প্লাস্টিকের ছাউনি থাকায় মুহূর্তের মধ্যে সেই আগুন বস্তির বিভিন্ন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দমকল এসে কাজ শুরু করলেও ৫০টি মতো ঝুপড়ি একেবারেই পুড়ে গিয়েছে বলে দমকল সূত্রের খবর। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু এবং এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মদন মিত্র। দমকলমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে ডানলপ দমকল কেন্দ্র মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। ফলে খবর পেয়েই তড়িঘড়ি দমকলের ইঞ্জিন এসে পৌঁছয়। কিন্তু প্লাস্টিকের ছাউনি থাকার জন্য আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’’ তবে ঝুপড়িগুলি সেতুর ঢালে থাকায় উপর থেকে জল দিয়ে আগুন নেভাতে সুবিধে হয় বলে জানান দমকলমন্ত্রী। তবে উপর থেকে জল দিতে পারলেও বস্তির পাশেই রয়েছে রেলিং দেওয়া ফুটপাত। সেখানে ঢুকতে দমকলকে রেলিং কাটতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বস্তির অনেক ঘরেই গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। প্রায় ছ’-সাতটি সিলিন্ডার ফেটেছে। স্থানীয় কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে রবিবারের মধ্যেই বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য ত্রিপল ও প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শনিবার রাতে আগুন লাগার পরে বস্তির বয়স্ক, শিশু এবং মহিলাদের পাশের একটি খালি জায়গায় ত্রিপল পেতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরিন্দম ভৌমিক। তিনি জানান, তাঁরা স্থানীয় একটি ক্লাবে ছিলেন। রাত ৯টা নাগাদ আচমকা বিকট শব্দ শুনে বেরিয়ে এসে দেখেন দাউ দাউ করে জ্বলছে বস্তি। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সকলে মিলে এসে ঝুপড়িতে ঢুকে বয়স্ক, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের টেনে টেনে বার করে আনেন। এ দিকে বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক যুবক। আগুনে তাঁর মুখের এক দিক ঝলসে গিয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয়েরা জানান, আগুনে কোনও হতাহতের খবর না থাকলেও অনেকেরই সব জিনিস পুড়ে গিয়েছে। এমনই এক জন মায়া হাতি। দক্ষিণেশ্বর মন্দির যাওয়ার রাস্তায় তাঁর একটি চায়ের দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি, আমার ঘর পুড়ে ছাই।’’ অপর আর এক বাসিন্দা লক্ষ্মী মণ্ডল। তিনি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের বাইরে ভিক্ষা করেন। তাঁর একটি হাত নেই। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে আসতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। পরে কোনও রকমে এসে পৌঁছলেও ঘর বাঁচাতে পারেননি। তিনি এসে দেখেন, সব পুড়ে গিয়েছে। জানালেন, ঘরে সামান্য কিছু টাকা জমানো ছিল। তাও আর বেঁচে নেই।