‘বিয়ের আসরে’ আগুন

সিনেমা তখন প্রায় শেষের পথে। পর্দায় অভিনেতা বিশ্বনাথ সেনের সঙ্গে রেশমি সেনের বিয়ের তোড়জোড় চলছে। ছবির নাম ‘মন শুধু তোকে চায়’।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ০২:৩২
Share:

জ্বলছে-স্মৃতি: পুড়ছে মিলনী।

সিনেমা তখন প্রায় শেষের পথে।

Advertisement

পর্দায় অভিনেতা বিশ্বনাথ সেনের সঙ্গে রেশমি সেনের বিয়ের তোড়জোড় চলছে। ছবির নাম ‘মন শুধু তোকে চায়’।

হঠাৎই পোড়া পোড়া গন্ধে অস্বস্তি ছড়াল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জনা পঞ্চাশ দর্শক দেখলেন সিনেমা হলের ভিতরে আগুনের হল্কা। ধোঁয়া শ্বাস বন্ধ হওয়ার জোগাড়।

Advertisement

মঙ্গলবার বেলা ৩টে নাগাদ বসিরহাট শহরে ইছামতীর ধারে মিলনী সিনেমা হলের এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায়। শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। হলের কর্মীরা দর্শকদের বাইরে বেরোতে সাহায্য করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। ততক্ষণে অবশ্য সিনেমা হলের একতলা থেকে আগুন দোতলার ব্যালকনি হয়ে ছাদ পর্যন্ত ছড়িয়েছে। চেয়ার, আসবাবপত্র, রূপোলি পর্দা পুড়ে ছাই। তবে জখম হননি কেউ, এটুকুই বাঁচোয়া।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সিনেমা হলের ভিতরে তখনও দাউ দাউ করে আগুনের শিখা। ছাদের কড়ি-বরগা খসে খসে পড়ছে। দমকল বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্থানীয় মানুষজনও জল ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আসে।

সিনেমা হলের পাশেই বিজেপির কার্যালয়। আগুন লাগার সময়ে সেখানে যুব মোর্চার সভা হচ্ছিল। সিনেমা হল থেকে কালো ধোঁয়া, আগুনের হল্কা দেখে তাঁরাও সভা ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায় আসেন।

নেভানো হচ্ছে আগুন।—নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা বুবাই ঘোষ বলেন, ‘‘সিনেমা হলের সামনে একটি দোকানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার কানে এল। হলের কাছে গিয়ে দেখি, দর্শকেরা বেরিয়ে আসার জন্য ছোটাছুটি করছেন। সকলকে সাবধানে বাইরে বের করা হয়। ভিতরে ঢুকে দেখি, ভয়ঙ্কর অবস্থা। সব কিছু দাউ দাউ করে জ্বলছে।’’

কিন্তু কী ভাবে আগুন লাগল?

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ ও দমকল কর্তাদের অনুমান, শর্টসার্কিট থেকে অথবা ধূমপান থেকেই আগুন ছড়িয়েছে। হল মালিক চন্দন বসু বলেন, ‘‘১৯৫০ সালে আমরা বসিরহাটের প্রথম সিনেমা হলটি তৈরি করি।’’ এক সময়ে বসিরহাট শহরের মানুষের গর্বের ধন ছিল এই মিলনী সিনেমা হল। বহু মানুষের ছেলেবেলার বহু স্মৃতি এই হলকে ঘিরে।

এক প্রবীণ শহরবাসী এ দিন দাঁড়িয়েছিলেন একপাশে। দমকল কর্মীরা তখন আগুন নেভানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

প্রবীণ মানুষটি অস্ফূটে বললেন, ‘‘এখানেই প্রথম দেখা হয়েছিল আমার স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি চলে গিয়েছেন বছর দ’শেক হল। এখান দিয়ে যাতায়াতের পথে হলটার দিকে তাকালে মনে পড়ত ওঁর কথা। এ বার মনে হয় হলটাই আর থাকবে না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন