—প্রতীকী চিত্র।
রাত সওয়া ৯টা। আচমকা বিস্ফোরণের মতো শব্দে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসে দেখলেন ঘিঞ্জি এলাকার একটি বাড়ির দোতলায় দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। এক তলায় আটকে গিয়ে দুই বৃদ্ধা ভয়ে চিৎকার করছেন।
শুক্রবার রাতে পানিহাটির গভর্নমেন্ট কলোনির একটি বসত বাড়িতে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করতে গিয়ে এমনই দুর্ঘটনা ঘটল। ঘটনায় ওই বাড়ির একমাত্র ছেলে বুবাই দত্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে এসএসকেএমে ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের অনেকটাই ঝলসে গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, পানিহাটি পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কলোনিতে দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছেন বুবাইরা। বাবা তপন দত্তের মৃত্যুর পর থেকে মা ও ঠাকুমাকে নিয়ে থাকতেন বুবাই। পানশিলায় তাঁদের পারিবারিক একটি মুদির দোকান রয়েছে। স্থানীয়েরা জানান, প্রতি বছরই ওই দোকানে তুবড়ি বিক্রি করতেন বুবাই। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই কালীপুজোর সময় শখে তুবড়ি তৈরি করতেন বুবাই। ভাল তুবড়ি বানানোর সুনাম ছিল বলে দোকানেও বিক্রি করতেন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, সামনেই কালীপুজো, তাই বাড়ির দোতলার একটি ঘরে বসেই অন্য দিনের মতো তুবড়ির খোলে মশলা ভরছিলেন বুবাই। কোনও ভাবে সেই মশলায় আগুন লেগে গেলে মুহূর্তের মধ্যে তা ঘরে ছড়িয়ে যায়। মেঝেতে থাকা মশলা থেকে দপ করে আগুন জ্বলে ওঠায় বুবাইয়ের শরীরের উপরের অংশ ঝলসে যায়। পরে শুরু হয় বিস্ফোরণ। ঘরের জানালা বন্ধ থাকায় আগুন বাইরে বেরতে না পেরে ঘরের ভিতরেই তার তীব্রতা বাড়তে থাকে।
তখন বাড়ির একতলায় ছিলেন বুবাইয়ের মা অনুদেবী ও পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা ঠাকুমা। স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে এলেও আগুনের তীব্রতা এতই ছিল যে কেউ দোতলায় ঢুকতে পারেননি। ফলে ঘরের মধ্যেই বেশ কিছু ক্ষণ ধরে অগ্নিদ্বগ্ধ হতে হয় ওই যুবককে।
মুহূর্তের মধ্যে দোতলার দু’টি ঘরই জতুগৃহের চেহারা নেয়। দমকলের চারটি ইঞ্জিন প্রায় তিন ঘণ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। কোনও মতে উদ্ধার করা হয় বুবাইকে। তাঁকে প্রথমে পানিহাটি বলরাম স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি এতটাই অগ্নিদ্বগ্ধ হয়েছিলেন যে সেখান থেকে তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
বুবাইদের দোতলার দু’টি ঘরই ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার পরে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পৌঁছন স্থানীয় কাউন্সিলর সুভাষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির মধ্যে কী ভাবে বাজি তৈরি হচ্ছিল, তদন্ত করা হবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল দে বলেন, ‘‘ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন ছড়ানোর আশঙ্কায়, সকলেই বাড়ির বাইরে চলে এসেছিলেন।’’ উত্তর ২৪ পরগনার এক দমকল আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’