বাঁধ উপচে জলমগ্ন কাকদ্বীপের গ্রাম

কালীপুজোর শেষ রাত থেকে পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর দক্ষিণ পাড়ায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ৫টি জায়গায় সমুদ্রবাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৯
Share:

জলমগ্ন: মৌসুনির বালিয়াড়া।— নিজস্ব চিত্র

অমাবস্যার কোটালের সঙ্গে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে নদীর জলোচ্ছ্বাসে জলমগ্ন হল কাকদ্বীপ মহকুমার বেশ কিছু এলাকা। বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধ ধসে গিয়েছে। পাথরপ্রতিমা এবং ফ্রেজারগঞ্জে ১৭টি পরিবারকে সমুদ্রের ধার থেকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। শুঁটকি মাছ, ফসল, পান ও পুকুরের মাছের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির জন্য বাঁধ মেরামতির কাজ ব্যাহত হচ্ছে মহকুমার ৮টি জায়গায়। তবে হতাহতের খবর নেই।

Advertisement

কাকদ্বীপ সেচ দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার নমিত সাহা বলেন, ‘‘জলের গভীরতা এ বার কোটালের সময়ে অন্যান্য বারের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড হাওয়ায় নদীগুলিতে বড় বড় ঢেউ তৈরি হয়েছে। তাতেই বেশ কয়েকটি জায়গায় বাঁধ উপচে গিয়েছে। আমরা সব জায়গাতেই মেরামতির কাজ চালাচ্ছি। বৃষ্টি একটু ধরলে কাজে গতি আসবে।’’

কালীপুজোর শেষ রাত থেকে পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর দক্ষিণ পাড়ায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ৫টি জায়গায় সমুদ্রবাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকতে শুরু করে। বাঁধ-লাগোয়া সাতটি পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তাঁদের গোবর্ধনপুর হাইস্কুলে ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। সংলগ্ন এলাকায় প্রায় দু’শো বিঘে এলাকায় চাষের জমি, মিষ্টি জলের পুকুর নষ্ট হয়েছে। কিছু দিন আগেই সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই এলাকার ভাঙনের অবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন। সেচ দফতরের তরফে বর্ষার পরে বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার কথা।

Advertisement

নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপে আয়লার পর থেকে বালিয়াড়ায় মুড়িগঙ্গার ধারে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নেই। জলোচ্ছ্বাসের জেরে বালিয়াড়ায় কয়েকশো পরিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তবে ত্রাণ শিবির খুলতে হয়নি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। চাষের জমি এবং মাছের পুকুরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে।

ফ্রেজারগঞ্জের দাস কর্নারের কাছে প্রায় ৩০০ ফুট এলাকায় দুর্বল বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। এখান থেকে ১০টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে স্থানীয় ত্রাণশিবিরে।

কাকদ্বীপের নারায়ণপুর চতুর্থ ঘেরির কাছে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর বাঁধ হাত পঞ্চাশ ধসে গিয়েছে। আরও ৩০০ ফুট অংশ দিয়ে জল উপচে প্রায় একশো বাড়িতে জল ঢুকেছে। জমি, পুকুর নষ্ট হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নারায়ণপুরের প্রধান পবিত্র মণ্ডল এবং সেচ দফতরের কর্মকর্তারা গেলে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তি নায়েক জানান, সময়ে কাজ করেনি সেচ দফতর। এখন গ্রামবাসীর কাছে জমি চাইলে তা দিতে অস্বীকার করে কয়েকটি পরিবার। তা নিয়েই বচসা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়। প্রধানের দাবি, বাঁধ মেরামতির বরাত হলেও জমি দিচ্ছেন না মানুষ। রবীন্দ্র পঞ্চায়েতের পালানের খেয়াঘাট এলাকাতেও জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে এলাকায়।

সাগরের বোটখালি, বঙ্কিম নগর এলাকায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। এলাকায় শুঁটকি মাছের খামার (খটি) রয়েছে অনেক। স্থানীয় খটি ব্যবসায়ী আবদার মল্লিক বলেন, ‘‘কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছি।’’ বোটখালিতে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। তা ছাড়াও, রামকরচর, গঙ্গাসাগর, ধসপাড়া, মুড়িগঙ্গা এবং ধবলাট এলাকায় প্রচুর পানের বরজ পড়ে গিয়েছে ঝোড়ো হাওয়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন