নৈহাটিতে কাজে বাধা অফিসারকে

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ পুরসভায় এসে ঢোকেন কার্যনির্বাহী আধিকারিক রামদেব প্রসাদ বার্নোয়াল। তাঁর অভিযোগ, তিনি যখন পুরসভায় ঢুকছিলেন তখন লক্ষ্য করেন নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় ৩০-৪০ জন বহিরাগতের জটলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুর এলাকায় ঘরছাড়া শাসকদলের সমর্থকেরা। অভিযোগ, বিজেপির দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ খোদ নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যানও। বিষয়টি চরম পর্যায়ে পৌঁছতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ, বৃহস্পতিবার নৈহাটি পুরসভার সামনে দলীয় প্রতিনিধিদের ডাকা অবস্থানে হাজির হবেন। তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার ৩১জন কাউন্সিলরের মধ্যে ইতিমধ্যেই ২৯ জন কাউন্সিলর গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। অন্যদিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, কাউন্সিলরদের ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। এমনকী বুধবার সকালে ওই পুরসভায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিজেপির দুষ্কৃতীরা। সেই অভিযোগ এ বিষয়ে মানতে নারাজ বিজেপি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ পুরসভায় এসে ঢোকেন কার্যনির্বাহী আধিকারিক রামদেব প্রসাদ বার্নোয়াল। তাঁর অভিযোগ, তিনি যখন পুরসভায় ঢুকছিলেন তখন লক্ষ্য করেন নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় ৩০-৪০ জন বহিরাগতের জটলা। ওই আধিকারিককে দেখে এ দিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় বহিরাগতেরা। এরপরেই বেশ কয়েক জন মুখে কাপড় বেঁধে আচমকাই রামদেব প্রসাদের ঘরে ঢুকে হুমকি দিয়ে জানায়, কোনও ফাইল যেন সরানো না হয়। এমনকী তাঁকে ফাইলে সই করতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের ঘরের চাবি দাবি করে ওই বহিরাগতেরা। কিন্তু চাবি দিতে রাজি হননি ওই কার্যনির্বাহী আধিকারিক।

তাঁর আরও অভিযোগ, এরপরেই বোর্ডে ঝোলানো চাবির গোছা থেকে অশোকবাবুর ঘরের চাবিটি খুঁজে নিয়ে ওই বহিরাগতেরা চলে যায়। এরপরে চেয়ারম্যানের ঘরে ঢুকে সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্‌ক নিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে নতুন দুটি তালা ঝুলিয়ে দেয় ওই দুষ্কৃতীরা। এমনকী ভেঙে ফেলে দেওয়া হয় ঘরের বাইরে লাগানো চেয়ারম্যানের নাম লেখা বোর্ডটিও। গোটা পুরসভা চত্বর মুড়ে দেওয়া হয় গেরুয়া পতাকায়। বেশ কিছুট জিনিসপত্রও ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ব্যারাকপুরের উচ্চপদস্থ কর্তারা।

Advertisement

সকালের ওই ঘটনার পরই নৈহাটির পুর চেয়ারম্যান অশোকবাবু, স্থানীয় বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে নিয়ে সরাসরি কলকাতা পুরভবনে পৌঁছন। সেখানে কলকাতার মেয়র তথা পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে পুরো ঘটনার কথা জানান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ‘ঘরছাড়া’ শাসকদলের দলের আরও কয়েকজন। তাঁদের বক্তব্য শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরো বিষয়টি জানান ফিরহাদ। কথা বলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারের সাথেও। বিজেপির যে দুষ্কৃতীরা তা করছে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলা হয়।

পরে মন্ত্রী ফিরহাদের সামনে সাংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোকবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘ফলাফল বের হওয়ার হওয়ার পর ভয় দেখিয়ে আমাদের কাউন্সিলরদের আধারকার্ড নিয়েছেন বিজেপির কিছু নেতা। পরে দিল্লিতে তাঁদের নিয়ে গিয়ে জোর করে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছেন। ওরা নৈহাটিতে দাপাদাপি করছে। বাড়ি বাড়িতে হামলা করছে। ভয় দেখাচ্ছে। ডায়ালিসিস সেন্টার থেকে রোগীকে বের করে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। চেয়ারম্যানের ঘরে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। ভাঙচুর করছে। আমার অফিসারকে ধাক্কা মেরে বের করে দিয়েছে। রীতিমত তাণ্ডব চালাচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘গায়ের জোরে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এ সব করছে। নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতিতে অনাস্থা এনে নতুন বোর্ড গঠন করুক। ওঁরা গণতান্ত্রিক উপায়ে অনাস্থা আনুন। সেটা তো আইনি অধিকার। তা না করে জোর করে, ভয় দেখিয়ে করা হচ্ছে।’’

এসব শোনার পরই নৈহাটি পুরসভার সামনে দলের পক্ষে অবস্থান বিক্ষোভ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সেখানে হাজির থাকার কথা জানান। তারপরই পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে জোর তৎপরতা। ঘটনার সঙ্গে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত বলেই অভিযোগ করেছেন অশোকবাবু। তবে এই ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত নয় বলেই এ দিন দাবি করেছেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর গণেশ দাস। তিনি বলেন, ‘‘বোর্ড তৃণমূলের হাতছাড়া হবেই। আগামী দিনে নিয়ম মেনে নতুন পুরবোর্ড গঠন হবে। কপালে তিলক কেটে কেউ যদি বিজেপির নাম করে এমন কাণ্ড ঘটান তা বরদাস্ত করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন