পথেঘাটে নিশ্চিন্ত থাকতে ক্যারাটে শিখছে মেয়েরা

মেয়েটির বয়স পনেরো ছুঁইছুঁই। সম্প্রতি তার বাড়িতে পরিচিত কয়েকজন বান্ধবী এসেছিল সন্ধ্যায়। গল্প করতে করতে রাত ৯টা বেজে যায়। বান্ধবীদের কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে এসেছিল ওই কিশোরী। হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল স্থানীয় রামনগর রোড ধরে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৬ ০২:১৩
Share:

প্রশিক্ষণ বাড়াচ্ছে আত্মববিশ্বাস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মেয়েটির বয়স পনেরো ছুঁইছুঁই। সম্প্রতি তার বাড়িতে পরিচিত কয়েকজন বান্ধবী এসেছিল সন্ধ্যায়। গল্প করতে করতে রাত ৯টা বেজে যায়। বান্ধবীদের কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে এসেছিল ওই কিশোরী। হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল স্থানীয় রামনগর রোড ধরে। সাইকেলে চেপে অল্প বয়সী দুই যুবক তার পিছু নেয়। পিছন থেকে ক্রমাগত জোরে জোরে বেল বাজাতে থাকে তারা। দু’একটি কটূ মন্তব্যও উড়ে আসে। প্রথমে বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে হনহন করে হেঁটে এগিয়ে যায় ওই কিশোরী। কিন্তু ছেলে দু’টির উৎসাহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। তখন কিশোরীটির মনে হল একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার। হাঁটার গতি আচমকা কিছুটা কমিয়ে দেয় মেয়েটি। পিছন ফিরেই মেয়েটি সজোরে দুই যুবককে লক্ষ করে ঘুষি চালায়। প্রশিক্ষিত হাতের ঘুষিতে সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে দু’জন। সুবিবধা করতে পারবে না ধরে নিয়ে সাইকেল ঘাড়ে তুলেই দৌড়ে পালায়।

Advertisement

ঘটনাটি মাস তিনেক আগেকার। ওই ঘটনাটি অবশ্য ব্যতিক্রম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় রাস্তায় বেরিয়ে মেয়েরা নানা ভাবে কটূক্তি বা অশ্লীল ব্যবহারের শিকার মুখ বুজে সব সহ্য করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। কারণ, সকলে তো ওই কিশোরীর মতো ক্যারাটে প্রশিক্ষিত নয়!

ইদানীং অবশ্য মেয়েদের মধ্যে ক্যারাটে শেখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে মফস‌্সল শহর বনগাঁয়। বাবা মায়েদেরও উৎসাহ আছে তা নিয়ে। বেশিরভাগ অভিভাবকদের বক্তব্য, স্কুল কলেজ বা নানা প্রয়োজনে মেয়েদের একাই রাস্তায় যাতায়াত করতে হয়। মেয়ে ক্যারাটে জানলে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত।

Advertisement

বনগাঁর বিশিষ্ট ক্যারাটে প্রশিক্ষক প্রৌঢ় তপন কর্মকার ৩৫ বছর ধরে ক্যারাটে শেখাচ্ছেন। তাঁর কাছে এখন বিভিন্ন বয়সের কুড়িটি মেয়ে ক্যারাটে শিখছে। তপনবাবুর কথায়, ‘‘মেয়েদের নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাটে শিখে রাখাটা জরুরি। অভিভাবকদের মধ্যেও এখন মেয়েদের ক্যারাটে শেখানোর আগ্রহ বেড়েছে।’’

স্থানীয় শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা এক বধূ গৌরী দাস তাঁর দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে স্নিগ্ধাকে এক বছর ধরে তপনবাবুর কাছে ক্যারাটে শেখাচ্ছেন। গৌরীদেবীর কথায়, ‘‘এখন দিনকাল যা পড়েছে, তাতে রাস্তায় বেরিয়ে মেয়েরা নিরাপদ নয়। ক্যারাটে মেয়েদের কাছে একটা অস্ত্রের মতো। তাই মেয়েকে শেখাচ্ছি।’’ পূর্বপাড়ার বাসিন্দা সাত বছরের শ্রেয়া হালদারও ক্যারাটে শিখছে। তার মা মিতাদেবী জানান, ওর সাড়ে পাঁচ বছর বয়স থেকেই ক্যারাটের প্রতি আগ্রহ ছিল। টিভিতেও মন দিয়ে ক্যারাটে দেখত। বাড়িতে হাত-পা ছুড়ত। ওর আগ্রহ তো রয়েছেই। তা ছাড়া প্রত্যেক দিন খবরে নানা ঘটনার কথা শুনছি। তাতে ক্যারাটে শেখাটা সত্যিই এখন জরুরি।’’

স্থানীয় নরহরিপুর বিদ্যাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দেবারতি বিশ্বাস চার বছর ধরে ক্যারাটে শিখছে। সে-ও মনে করে, স্কুলে যাতায়াতের পথে বা ভবিষ্যত জীবনে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য ক্যারাটে শিখে রাখাটা প্রয়োজন। একই কারণে ক্যারাটে শিখছে শক্তিপুরের নবম শ্রেণির অয়ন্তিকা দত্ত, চড়কতলার প্রিয়া মাঝি এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়িতা বিশ্বাসরা।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আর এক প্রান্ত কামদুনিতে ঘটে গিয়েছে ছাত্রীকে খুন করে ধর্ষণের ঘটনা। দিদির সম্মান বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছিল বারাসতের দশম শ্রেণির ছাত্র রাজীব দাস। পথে বেরিয়ে রোজই স্কুল-কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে মহিলারা নানা ভাবে বখাটে ছেলেদের কটূক্তির শিকার হচ্ছে। এই পরিস্থিতিই মেয়েদের ক্যারাটে শেখার আগ্রহ বাড়াচ্ছে, মনে করেন সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন