গদখালিতে ৫০ লক্ষের ট্যুরিস্ট লজ ভেঙে সেতু, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

বহু টাকা খরচ করে প্রথমে গড়া হল ট্যুরিস্ট লজ। পরে সেটিকে বদলে শুরু হয় নোনা জল মিষ্টি করার প্ল্যান্ট তৈরির কাজ। সময় মতো সেই কাজও সময়ে শেষ করতে না পারায় আদালতে রাজ্য সরকারের গাঁটগচ্চা গিয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা

Advertisement

সমীরণ দাস

গদখালি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৯
Share:

এই সেই বিতর্কিত নির্মাণ। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

বহু টাকা খরচ করে প্রথমে গড়া হল ট্যুরিস্ট লজ। পরে সেটিকে বদলে শুরু হয় নোনা জল মিষ্টি করার প্ল্যান্ট তৈরির কাজ। সময় মতো সেই কাজও সময়ে শেষ করতে না পারায় আদালতে রাজ্য সরকারের গাঁটগচ্চা গিয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। এখন সেই পরিকল্পনা বদলে ট্যুরিস্ট লজ ভেঙে সেখানে একটি সেতু তৈরি করতে চাইছে রাজ্য। সরকারি টাকা এভাবে জলে ফেলা বিরক্ত এলাকার মানুষ।

Advertisement

বেশ কয়েক বছর আগে গদখালিতে নদীর পাড় ঘেঁষে শুরু হয় লজ তৈরির কাজ। কাজ অনেক দূর এগিয়েও যায়। কিন্তু কোস্টাল রেগুলেশন জোন আইন লঙ্ঘন করায় বছর তিনেক আগে সেই লজ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় পরিবেশ আদালত। লজ না ভেঙে সেখানে নোনা জলকে মিষ্টি করার প্ল্যান্ট করতে চেয়ে আবেদন করে সরকার। আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। কিন্তু তিন বছরেও সেই প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শেষ হয়নি। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, তিন মাসের মধ্যে প্ল্যান্টের কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতেও ব্যর্থ হয় সরকার।

মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত একটি মামলায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ হিসেবে রাজ্যের জমা রাখা ৫০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল। এই টাকা পরিবেশ উন্নয়ন খাতে খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

সরকারি আইনজীবী প্ল্যান্টের কাজ শেষ করার জন্য আরও কিছুটা সময় চেয়ে নেন। ১০ লক্ষ টাকা ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ জমা রেখে আদালত আরও দু’মাস সময় দিয়েছে। আদালতে রাজ্যের আইনজীবীও দাবি করেন, প্ল্যান্টের কাজ অনেকটা হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্যই দু’মাস সময় চাওয়া হয়েছে।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত গদখালি-গোসাবা সেতুর জন্য ভাঙা পড়বে পুরো লজটাই। সুতরাং ওখানে মিষ্টি জলের প্ল্যান্ট তৈরির প্রশ্নই নেই। ক্যানিংয়ের মহকুমা শাসক অদিতি চৌধুরী বলেন, ‘‘প্ল্যান্টের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেতুর জন্য পুরো ভবনই ভেঙে ফেলতে হবে। তাই ওখানে প্ল্যান্ট করা সম্ভব নয়।’’ তা হলে আদালতে ফের ১০ লক্ষ টাকা ‘পারফরম্যান্স গ্যারান্টি’ হিসেবে জমা রাখা হল কেন? উত্তর মেলেনি প্রশাসনের কাছে।

যদিও বুধবার গদখালিতে গিয়ে ‘গদখালি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট’ লেখা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি বোর্ড চোখে পড়ল লজের সামনে। তবে বিশাল লজ পড়ে রয়েছে তালাবন্ধ অবস্থায়। ভেতরে কোনও কাজ হয়েছে কিনা বা কাজ চলছে কিনা, বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় মানুষ জন জানালেন, দীর্ঘ দিন কোনও কাজ হতে দেখেননি এখানে। স্থানীয় নৌকা চালক পবিত্র সর্দারের কথায়, ‘‘লজ নিয়ে কী একটা গন্ডগোল হয়েছে শুনেছিলাম। পরে শুনলাম জলের প্ল্যান্ট হচ্ছে। তবে সে ভাবে কাজ হতে তো দেখিনি। এখন আবার শুনছি এখান দিয়েই নাকি সেতু যাবে।’’ স্থানীয় বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর জানান, ভেতরে জল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন আবার সবটাই ভেঙে ফেলতে হবে সেতুর জন্য।’’

কোস্টাল আইন ভেঙে লজ তৈরি, নির্দিষ্ট সময়ে ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্টের কাজ শেষ করতে না পেরে জরিমানা দেওয়া, এখন আবার বহু ব্যয়ে তৈরি ভবন ও প্ল্যান্ট ভেঙে ফেলার উদ্যোগ—সরকারি টাকা দরিয়ায় ঢালার এই প্রকল্প এখন এলাকার মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন