সামলে চলো...।— ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
মঙ্গলবার একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বনগাঁ শহরের বহু এলাকা। কোথাও রাস্তায় হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে। আবার কোথাও আবার বাড়ির উঠোনে থইথই করছে জল। উপচে গিয়েছে বেশির ভাগ নিকাশি নালা। জলমগ্ন রাস্তায় কমে গিয়েছে যানবাহন।
বুধবার দুপুরে বনগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন স্কুল এবং বনগাঁ থানা চত্বরে জল জমে রয়েছে। সেই জল ভেঙে যাতায়াত করছেন মানুষ। টাল সামলাতে না পেরে পড়েও যাচ্ছেন অনেকে। ১ নম্বর রেলগেট থেকে ২ নম্বর রেলগেট যাওয়ার রাস্তা জলমগ্ন থাকার কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেললাইনের পাশের বাড়িতে ঢুকেছে জল। শক্তিগড় উচ্চবিদ্যালয়, উপেন্দ্র বিদ্যামন্দিরের মতো কয়েকটি স্কুলের মধ্যে থইথই করছে জল। স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় ভ্যান চালক বিশ্বনাথ রায়ের বাড়ির উঠোনে জল জমেছে। বিশ্বনাথবাবুর ক্ষোভ, ‘‘বর্ষা হলেই আমাদের এই দুর্ভোগে পড়তে হয়। নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জল বেরোনোর রাস্তা নেই। বৃষ্টি না কমলে বাড়ি ছাড়তে হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১, ৫, ৬, ১৯, ২২, ২০, ২১, ১৪, ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে ঘুরে মানুষের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। মহকুমা শাসকের কাছে ত্রিপল চাওয়া হয়েছে। আমরা দুর্গত মানুষের পাশে রয়েছি।’’ তিনি জানান, নিকাশি সমস্যা মেটাতে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জমা দেওয়া হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
যদিও পুরপ্রধানের আশ্বাসে মন গলছে না বনগাঁবাসীর। সাম্প্রতিক সময়ে এই শহরে নতুন সাংস্কৃতিক ভবন, নতুন পুরভবন, বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি হয়েছে। রাস্তায় পথবাতি বসেছে। কিন্তু নিকাশির হাল নিয়ে সন্তুষ্ট নন বাসিন্দারা। শহরবাসীদের দাবি, বহু বছর ধরে পরিকল্পিত নিকাশির দাবি করা হলেও আশ্বাস ছাড়া কিছু জোটেনি। অল্প বৃষ্টিতেই বনগাঁ শহর জলমগ্ন হয়ে যায়। ভারী বৃষ্টি হলে তো গোটা শহরটাই পুরো অবরুদ্ধ হয়ে যায়। বনগাঁ শহর কংগ্রেসের সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দের ক্ষোভ, ‘‘পরিকল্পিত নিকাশি নালা না থাকার কারণে শহরের মানুষকে প্রতি বছর দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নিচু এলাকায় বাড়ি হওয়ায় জল বেরনোর রাস্তাগুলোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
বনগাঁ শহরের নিকাশির বেশির ভাগটাই নির্ভর করে ইছামতী নদীর উপর। শহরের জমা জল নিকাশি নালার দিয়ে ইছামতী এসে পড়ার কথা। কিন্তু সেই নদী নাব্যতা হারিয়ে কচুরিপানায় মুখ ঢেলেছে। ফলে জল নদী পর্যন্ত আসে না। বেশিরভাগ নিকাশি নালার উপরে তৈরি হয়েছে দোকান, বাড়ি। ফলে জল বেরোতে পারছে না। সম্প্রতি পুরসভা ও প্রশাসন নিকাশি নালা দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করলেও তাতে এই বর্ষায় লাভ হবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘শহরের নিকাশির প্রধান মাধ্যম ইছামতী নদীর জলধারণ ক্ষমতাই নেই। নদীর উৎস মুখ সংস্কার না হলে সমস্যা মেটানো মুশকিল।’’
বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস জানান, সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রী ও সেচমন্ত্রীকে বলা হয়েছে। নদী সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হবে।