বেলুন-বোমা নয়, হাতে হাতে পলাশ

বস্তুত, হাবড়া এবং বনগাঁয় এ বার এমন দোলের দিন দৃশ্যটা অনেক জায়গাতেই এ ভাবে বদলে গিয়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:০১
Share:

অন্য-মেজাজে: হাবড়ার বেড়গুমে প্রভাতফেরি বেরোল দোলের সকালে। নিজস্ব চিত্র

ভয়ে ভয়েই বৃহস্পতিবার স্টেশন থেকে রাস্তায় নেমেছিলেন মাঝবয়সী বিকাশ সরকার। তাঁর নিজের এলাকা হাবড়া। সেখানে দোলের সকাল কেমন হতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন বিকাশবাবু। আতঙ্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক।

Advertisement

কিন্তু স্টেশন নেমে ইস্তক তাঁর মুখচোখের ভাবসাব বদলে যেতে লাগল।

টোটোয় চড়ে যতই বাড়ির দিকে এগোলেন, ততই বড্ড অচেনা ঠেকল নিজের শহর। কোথায় সেই বাঁদুরে রঙ মেখে বাইকে চড়া বেপরোয়া যুবকের দল? রাস্তায় আসার সময়ে উড়ে এল না তো ভরা বেলুন! মদ্যপদের দাপাদাপি? নাহ, তা-ও তো চোখে পড়ল না।

Advertisement

বিস্ময়‌ের তখনও বাকি ছিল।

পাড়ার মোড়ে পৌঁছে বিকাশবাবু দেখলেন, ‘‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’’ গানের সঙ্গে নাচছে তাঁরই পাড়ার মেয়েরা। গাইছে ছেলেদের দল। টোটো থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে একদল ছেলে ছুটে আসায় ফের কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কেউ সবুজ-বেগুনি-সোনালি রঙ দিল না মুখে। বরং মাথায়-গালে আবির মাখিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে হাতে রসগোল্লা ধরিয়ে এক কিশোর বলে গেল, ‘‘খেও নাও কাকু, হ্যাপি হোলি।’’ কে যেন আবার হাতে পলাশের একটা ডাল ধরিয়ে দিল।

চাকরি সূত্রে বর্ধমানে থাকা বিকাশবাবুর কাছে নিজের এলাকা দোলে এতটাই নতুন ঠেকল।

বস্তুত, হাবড়া এবং বনগাঁয় এ বার এমন দোলের দিন দৃশ্যটা অনেক জায়গাতেই এ ভাবে বদলে গিয়েছে। নাচ-গান-কবিতায় ভরে উঠেছে বসন্ত উৎসবের সকাল। মদ্যপদের দাপাদাপি এক সময়ে এলাকার পরিচিত ঘটনা ছিল। এ বার তার দেখা মেলেনি বললেই চলে।

বছর দু’য়েক আগেও দোলের দিন বনগাঁ ও হাবড়া শহরের সাধারণ মানুষের কাছে ছিল আতঙ্কের দিন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতেন না কেউ। শহরের রাস্তা মদ্যপ যুবকদের দখলে চলে যেত। রাস্তায় চলত বেপরোয়া মোটরবাইকের দাপাদাপি। রাস্তায় বেরিয়ে চটাস করে পিঠে-বুকে বেলুন এসে লাগেননি, এমন অভিজ্ঞতা খুব কম জনেরই। এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘বেলুনে শুধু রং নয়, গোবরগোলা, ভুসো কালি, কেরোসিনও ভরা থাকতে দেখছি। রঙের উৎসবের মজাটাই মাটি করে দিত কিছু ছেলে।’’ বনগাঁর শিক্ষক রাধাকান্ত পাইন জানালেন, দোলের দিন বোমা-গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

বৃহস্পতিবার হাবড়া পুরসভার তরফে স্থানীয় বাণীপুরে আয়োজন করা হয়েছিল বসন্ত উৎসবের। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে। নাচ-গান-কবিতা, খাওয়া-দাওয়া সবই ছিল সেখানে। পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘প্রায় দশ হাজার মানুষ ওই উৎসবে এসেছিলেন। দোলের একটা সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আমাদের এই প্রয়াস।’’ হাবড়া বেড়গুম কৃষ্ণনগরের একটি ক্লাবও বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিল। রবীন্দ্রনাথের বসন্ত উৎসবের ইতিহাস সকলের সামনে তুলে ধরা হয়। উদ্যোক্তাদের তরফে স্বপ্না ঘোষ বলেন, ‘‘এলাকার মানুষকে আবির মাখানোর পাশাপাশি মিষ্টি ও পলাশ ফুল দেওয়া হয়েছে।’’

বনগাঁ শহরের বেশ কয়েকটি ক্লাব পৃথক ভাবে শহরে শোভাযাত্রার মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালন করেছে। শহরের ত্রিকোণ পার্কে নাচের অনুষ্ঠান হয়। পথচলতি বহু মানুষ সেখানে ভিড় করেন। স্থানীয় শিক্ষক সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘মদ্যপদের বদলে এ বার দেখলাম রাস্তার দখল নিয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কয়েক বছর আগেও রাস্তায় বেরনো যেত না। এখন মেয়েরাও রাস্তায় বেরিয়ে নাচ গান করছে।’’ স্থানীয় একটি ক্লাব নবদ্বীপ থেকে একটি গানের দলকে এনেছিল।

পুলিশের তথ্য বলছে, দোলে সারা দিনে বনগাঁ শহরে পুলিশ মাত্র ১৫টি মোটরবাইক চালককে আটক করেছে। দু’বছর আগেও এই সংখ্যা থাকত প্রায় দু’শোর মতো। পুলিশের এক কর্তাও বলছেন, ‘‘সত্যিই, বদলটা খালি চোখে ধরা পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন