আল্ট্রাসোনোগ্রাফির তারিখ পেতেই দু’বছর!

এক বছরেরও বেশি সময় পরে পরীক্ষার তারিখ পেয়ে মহিলা কাকুতিমিনতি শুরু করেন। অভিযোগ, তখনই তাড়া থাকলে বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৮ ০১:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

পেটে যন্ত্রণা নিয়ে বারাসত জেলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন আমডাঙার এক বধূ। চিকিৎসক আল্ট্রাসোনোগ্রাফি-সহ কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। অভিযোগ, হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে গেলে তাঁকে বলা হয়, ‘এখন হবে না’। ২০১৯ সালের অগস্টে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। এক বছরেরও বেশি সময় পরে পরীক্ষার তারিখ পেয়ে মহিলা কাকুতিমিনতি শুরু করেন। অভিযোগ, তখনই তাড়া থাকলে বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement

এর পরে এক বেসরকারি কেন্দ্রে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে গিয়েও খরচ দেখে ফিরে আসেন দরিদ্র পরিবারের ওই মহিলা। অন্য পরীক্ষাগুলি করিয়ে ফের হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসক জানিয়ে দেন, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি না হলে চিকিৎসা সম্ভব নয়। ফের হাসপাতালে গিয়ে কার্যত হাতে-পায়ে ধরেন তিনি। কিন্তু এ বার প্রায় ২ বছর পরে ২০২০ সালে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। মহিলার অভিযোগ, কান্নাকাটি করায় তাঁকে বার করেও দেওয়া হয়।

এর পরে পুরো ঘটনা জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানান ওই মহিলা। স্বাস্থ্য দফতর থেকে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডলকে। সুব্রতবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘এটা লেখার ভুল। ওই মহিলার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হবে।’’

Advertisement

জেলা হাসপাতাল থেকে দেওয়া দু’টি স্লিপে ২০১৯ এবং ২০২০ সালের তারিখের (চিহ্নিত) উল্লেখ।

যে কোনও ক্ষেত্রেই এক মাসের মধ্যে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করতে হবে বলে নোটিস দেওয়া রয়েছে বারাসত হাসপাতালে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ঘটল এই ঘটনা?

নাজমুন নাহার (২১) নামে অভিযোগকারিণী ওই মহিলা জানান, তিনি আমডাঙার দারিয়াপুরের বাসিন্দা। স্বামী গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালান। তাঁদের বছর তিনেকের একটি ছেলেও রয়েছে। পেটে ব্যথা নিয়ে মাস আটেক আগে বারাসত হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন নাজমুন। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, নিয়মিত হাসপাতালে দেখাতে হবে। ফের পেটে ব্যথা হওয়ায় ১৬ এপ্রিল হাসপাতালে যান নাজমুন। চিকিৎসক আল্ট্রাসোনোগ্রাফির নির্দেশ দিলে হাসপাতালের পরীক্ষা কেন্দ্রে যান তিনি। নাজমুন বলেন, ‘‘প্রথমে ২০১৯ সালের ১৩ অগস্ট তারিখ দেয়। হাতে-পায়ে ধরলে বলে, নাটক করবেন না।’’ ২১ মে দ্বিতীয় বার যাওয়ার পরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম বার না হয় লেখার ভুল হয়েছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বার?

সোমবার, হাসপাতালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি পরীক্ষাগারে গিয়ে দেখা গেল, কাউকে দিনের দিন, কাউকে ৫-৭ দিন পরে আবার কাউকে ৬-৮ মাস পরে পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কেন? হাসপাতালের কর্মীদের কথায়, পরিকাঠামোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী পরীক্ষার জন্য আসছেন। ফলে ‘পরীক্ষার গুরুত্ব’ বিচার করেই তিন ধাপে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালে দু’টি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিন রয়েছে। রেডিয়োলোজিস্ট রয়েছেন দু’জন। প্রসূতি বিভাগে একটি মেশিনে গর্ভবতী মায়েদের পরীক্ষা হয়। অন্যটিতে সাধারণ রোগীদের।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত এপ্রিলে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। প্রতি দিন গড়ে সাড়ে চার হাজার রোগী আসেন, যার মধ্যে প্রায় পাঁচশো জনের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি প্রয়োজন। অথচ একটি মেশিনে প্রতি দিন দেড়শোর বেশি আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সম্ভব নয়। ফলে প্রতিদিন ৩৫০ জন রোগীকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

ওই বিভাগের কর্মীরা জানান, প্রসূতিদের এবং যে সব রোগী ভর্তি রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে সঙ্গেই আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। যাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে বা হবে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের পর পর তারিখ দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেই ‘বাকি রোগীদের’ পরীক্ষার সময় পিছিয়ে যাচ্ছে।

সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘পরিষেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। ওই মহিলা আমার কাছে আসেননি। কোনও সমস্যা নিয়ে কেউ এলেই আমরা মেটাতে চেষ্টা করি।’’ নাজমুন অবশ্য বলেন, ‘‘সুপারের কাছে গেলে হয়তো পরীক্ষাটা হয়ে যেত, কিন্তু সমস্যাটা সামনে আসত না। দ্বিতীয় বার ২ বছর পরে তারিখ দেওয়ায় পরেই প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন