রক্তমাখা জামা বদলে ঘর ছাড়ল ‘খুনি’ স্বামী

সন্ধ্যাবেলায় ছেলেমেয়ে দু’টি পড়ছিল কাকার কাছে। বাবা এসেই মায়ের সঙ্গে অশান্তি শুরু করে। মা ও কাকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পিছু নেয় বাবাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share:

তখন সুখের সময়।

সন্ধ্যাবেলায় ছেলেমেয়ে দু’টি পড়ছিল কাকার কাছে। বাবা এসেই মায়ের সঙ্গে অশান্তি শুরু করে। মা ও কাকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পিছু নেয় বাবাও। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ বাবা ফিরে আসে রক্তমাখা জামা পরে। কাউকে কিছু বললে ছেলেমেয়েকে খুন করার হুমকি দিয়ে পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় সে।

Advertisement

কিছুক্ষণ পরে প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে দেখে মায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। হাত পা কাটা। গলা অর্ধেকেরও বেশি কাটা। মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গির কোপে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠল বসিরহাটের সরনিয়া গ্রামের সাজাহান মোল্লার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম ফজিলা বিবি (২৫)। তাঁর দাদা রাজু সর্দারের অভিযোগের ভিত্তিতে সাজাহানের খোঁজ চলছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পনেরো বছর আগে সন্দেশখালির পূর্ব আতাপুর গ্রামের বাসিন্দা সাজাহানের বিয়ে হয় ফজিলার সঙ্গে। তাঁদের দুই সন্তান। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ির গ্রামে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকত সাজাহান। তার ছেলে সাহিন মোল্লা পঞ্চম এবং মেয়ে রিয়া প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। কাঠের কাজ করত সাজাহান। বিয়ের পর থেকেই ফজিলার উপর কারণে অকারণে চড়াও হত বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তি বলে অভিযোগ। মাস ছ’য়েক ধরে তাঁদের সঙ্গে সাজাহানের এক ভাই থাকতে শুরু করেন। তার সঙ্গে সাজাহান প্রায়ই স্ত্রীকে সন্দেহ করত বলে জানান গিয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পরে স্ত্রীর সঙ্গে বচসা বাধে সাজাহানের। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে ফজিলা ঘর থেকে বেরিয়ে যান। অভিযোগ, একটি টাঙ্গি নিয়ে তাঁর পিছু নেয় সাজাহান। বাথরুমের কাছে সে স্ত্রীর উপর চড়াও হয়। টাঙ্গি দিয়ে হাত ও পা কেটে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে স্ত্রীর গলা কেটে ফেলে সাজাহান বলে অভিযোগ। সাহিন পুলিশকে জানায়, বাবা এসে কাকা এবং মাকে খুব বকাবকি করে। মা ও কাকা বেরিয়ে যায়। এরপরেই মায়ের চিৎকার শোনা গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘কাউকে কিছু বললে খুন করে ফেলব বলে বাইরে থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় বাবা।’’ বেশ কিছুক্ষণ পরে বোন দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে মায়ের দেহ দেখতে পায় বলে জানায় সাহিন। এরপরেই প্রতিবেশীদের ডাকা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেশখালির পূর্ব আতাপুর গ্রামে থাকাকালীন সেখানকার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সাজাহানের। ২০১১ সালে মেছোভেড়ির দখলকে কেন্দ্র করে তার ছোড়া বোমার ঘায়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এক মহিলা। একই ভাবে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে গুলি করে মারার চেষ্টা করেছিল সাজাহান। জেলও খেটেছে সাজাহান। এরপরেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সাজাহান বসিরহাটের সরনিয়ায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে সে।

দু’টি ছেলেমেয়ে এখন মামার কাছে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন