রক্তাক্ত স্বপন পাল।
স্বামী-স্ত্রী। তাই সাদা চোখে অবিশ্বাস করার মতো কিছু ছিল না। তার উপরে আগের দিনই দীর্ঘ ক্ষণ আলাপচারিতা হয়েছে। ফলে, ভরদুপুরে দরজা খুলে দম্পতিকে ঘরে ঢোকাতে মনে প্রশ্ন জাগেনি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী স্বপন পালের। বাড়ি ভাড়া নিয়ে কথা হবে বলে স্থির হয়েছিল আগেই। তাই সন্দেহ হয়নি স্বপনবাবুর পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা পালেরও।
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার কানে আসে আর্ত চিৎকার। ছুটে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে তাঁর শ্বশুর। বাড়ি ভাড়া নিতে আসা যুবক-যুবতীর হাতে রক্তমাখা অস্ত্র। অভিযোগ, চিৎকার জুড়তেই আক্রমণ করা হয় তাঁকেও। কিন্তু প্রতিবেশীরা এসে যাওয়ায় পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়ে যায় ওই ‘দম্পতি’। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম নবীন শর্মা ও মঙ্গলা ধারা। নবীনের বাড়ি হিন্দমোটরে।
মঙ্গলা রিষড়ার বাসিন্দা। তারা দীর্ঘ দিন বেঙ্গালুরুতে ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। নবীন ও মঙ্গলাকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও স্বপনবাবু আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
শুক্রবার দুপুরের এই ঘটনায় হতবাক ব্যারাকপুরের নাপিতপাড়া। ব্যারাকপুর ১৫ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন ওই জনবহুল এলাকায় দোতলা বাড়ি স্বপনবাবুর। ছেলে রাজা পাল ও পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কাও একই বাড়িতে থাকেন। স্বপনবাবুর শ্যালক কানু বসু জানান, স্বপনবাবু একতলা ভাড়া দিতে চাইছিলেন। বৃহস্পতিবার নবীন এসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কথা বলে যায়। সে জানায়, শুক্রবার এসে বাড়ি দেখে ভাড়া চূড়ান্ত করবে।
ধৃত নবীন ও মঙ্গলা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রিয়াঙ্কাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটে নাগাদ কলিং বেল বাজে। চেনা লোক দেখে নিচে নেমে যান স্বপনবাবু। এরপরেই কানে আসে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। একতলার ঘরে গিয়ে তিনি দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন স্বপনবাবু। নবীনের হাতে ছুরি আর মঙ্গলার হাতে লোহার রড। আতঙ্কে প্রিয়াঙ্কাদেবী চিৎকার শুরু করায় মঙ্গলা তাঁকে মারধর শুরু করে। প্রতিবেশীরা এসে গেলে তাঁদের দেখে নবীনরা পালানোর চেষ্টা করে। দু’জনকে একটি ঘরে আটকে রেখে পুলিশ ডাকা হয়।
স্বপনবাবুকে প্রথমে স্থানীয় একটি নার্সিংহোম এবং পরে আর জি কর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাঁকে কম্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রিয়াঙ্কাদেবী জানান, দুষ্কৃতীরা স্বপনবাবুর একটি হার ছিড়ে নিয়েছিল। তাতে বাধা দেওয়ায় তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপায় তারা।
ধৃতদের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া ছিনতাইয়ের সরঞ্জাম দেখে কার্যত চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের। ব্যাগের মধ্যে গ্রিল এবং দেওয়াল কাটার সরঞ্জাম, ছুরি, মুখোশ, মাথায় পরানোর কাপড়ের ব্যাগ, শ্বাসরোধ করার জন্য দড়ি, লিউকোপ্লাস্ট-সহ বিভিন্ন জিনিস মিলেছে। পুলিশকে ধৃতেরা জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে এলাকায় ঘুরে ‘রেকি’ করেছিল তারা। আগেও ধৃতেরা কোনও অপরাধ করেছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডেপুটি পুলিশ সুপার (জোন ১) কে কারনান বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের সম্পর্কে আরও খোঁজ নিতে হুগলি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’