বরাহনগর গুলিকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়! —প্রতীকী চিত্র।
পিশেমশাইয়ের সঙ্গে প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী। তাই প্রেমের পথে কাঁটাকে উপড়ে ফেলতে মেটিয়াবুরুজ থেকে গুন্ডা ভাড়া করেছিলেন বরাহনগরের বধূ রেখা মজুমদার এবং তাঁর ‘প্রেমিক’ পিসেমশাই! গত ২১ নভেম্বর গুলিকাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছেন রেখা এবং তাঁর পিসেমশাই প্রবীর দে। পাকড়াও হয়েছেন মহম্মদ শামিম লস্কর নামে এক ভাড়াটে খুনি এবং সুশান্ত আদক নামে এক বাইকচালক।
২১ নভেম্বর ভোরে বরাহনগরের নর্দার্ন পার্কে বিকাশ মজুমদার নামে এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান পরিবহণ দফতরের কর্মী। কেন তাঁকে গুলি করার চেষ্টা করা হল, তার তদন্তে নেমে ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
জানা গিয়েছে, বিকাশের স্ত্রী রেখার সঙ্গে তাঁর পিসেমশাই প্রদীপ দে-র বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। সে জন্য বিকাশকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। খুনের বরাত দেওয়া হয় মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলের গুন্ডাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, রেখার মোবাইল পরীক্ষা করতে গিয়েই সংশ্লিষ্ট মামলার সমস্তটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ, স্বামীর দিকে গুলি ছোড়ার ঘটনায় স্ত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েই খটকা লেগেছিল তদন্তকারীদের। পুলিশের বেশ কিছু প্রশ্নে বিব্রত হয়ে পড়েছিলেন রেখা। তাঁর অসংলগ্ন জবাবে সন্দেহ গাঢ় হয়। রেখার মোবাইল পরীক্ষা করে পুলিশ। তাতে পিসেমশাইয়ের সঙ্গে রেখার বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি পাওয়া যায়। তা ছাড়াও প্রবীর এবং রেখার মেসেজে প্রেমালাপ এবং ভিডিয়ো কলের ‘হিস্ট্রি’ বার করেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২১ নভেম্বর ভোরে বাড়ির ময়লা ফেলতে বেরিয়েছিলেন বিকাশ। বাড়ি ফেরার পথে আক্রমণের মুখে পড়েন পরিবহণ দফতরের ওই কর্মী। পরে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু হয়।
ঘটনাক্রমে এলাকার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। জানা যায়, সে দিন ভোরে বিকাশকে খুন করতে দুই আততায়ী এসেছিলেন। একটি বাইকে ছিলেন তাঁরা। গুলি চালিয়ে বাইকেই চম্পট দেন দু’জন। টানা তল্লাশির পর দুই অভিযুক্তেরই খোঁজ মেলে। অন্য দিকে, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর রেখার মুখ থেকেও খুনের ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, পিসেমশাইয়ের সূত্রেই প্রথমে সুশান্ত এবং তার পর শামিমের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল রেখার। তার পর খুনের পরিকল্পনা হয়। রবিবার ধৃত চার জনকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে চেয়ে ব্যারাকপুর আদালতে পাঠায় বরাহনগর থানার পুলিশ। বিকাশকে খুনের জন্য ভাড়াটে খুনিকে সুপারি রেখা না কি প্রদীপ দিয়েছিলেন, সেটাই বিশদে জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা।