‘ভূত তাড়াতে’ অত্যাচার

এমনই ঘটল গাইঘাটা থানার মধ্য বকচরা এলাকায়।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:২৬
Share:

অমানবিক: ওঝার কেরামতি। নিজস্ব চিত্র

ভিড়ে গমগম করছে বাড়ি। উঠোনে বসে সদ্য বিবাহিতা এক তরুণী। সামনে জল-ভর্তি কলসি। তরুণীটিকে ঝাঁটাপেটা করছে এক ওঝা। মাঝে-মধ্যে তরুণীর পিঠে লাথি মারছে। চিৎকার করে উঠছেন তরুণী। কিন্তু ওঝার দাপট রোখে কে! তরুণীকে জল-ভর্তি কলসি দাঁত দিয়ে মুখে তুলতে নির্দেশ দিচ্ছে সে।

Advertisement

কী হয়েছে তরুণীর?

পরিবার সূত্রে জানা গেল, শুক্রবার সকাল থেকে ওই তরুণী অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। নিজেকে অন্য নামে পরিচয় দেন। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। স্বামী ও পরিবারের লোকজন ধরে নেন, ‘ভূতে ধরেছে’। ডেকে আনা হয় ওঝাকে।

Advertisement

শুরু হয় নির্যাতন। এক সময়ে বাধ্য হয়ে তরুণী দাঁত দিয়ে কলসি কামড়ে ধরে দৌড়তে শুরু করেন। তবে কয়েক পা যেতে না যেতেই হোঁটচ খেয়ে পড়লেন। দুই যুবক তাঁকে টেনে তোলেন। ফের শুরু হয় ঝাড়ফুঁক-পর্ব।

শুক্রবার বিকেলে এমনই ঘটল গাইঘাটা থানার মধ্য বকচরা এলাকায়। ঘটনার কথা জানতে পেরে শনিবার সকালে গ্রামে যান বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা। তাঁরা তরুণীর বাড়ি গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেন। মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘তরুণীর স্বামীকে আমরা বোঝাই, এটা মানসিক রোগ। কিন্তু তিনি কিছুতেই বুঝতে চাইলেন না। তিনি দাবি করতে থাকেন, তাঁর স্ত্রীকে ভূতেই ধরেছে। এ নিয়ে গ্রামের মানুষকে বোঝাতে গেলে তাঁরাও আমাদের উপরে ক্ষিপ্ত হন।’’ মঞ্চের তরফে তরুণীর পরিবারকে আশ্বাস দেওয়া হয়, তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার এবং তার খরচের দায়িত্ব তাঁরা নেবেন। তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু পরিবারটি রাজি হয়নি।

প্রদীপ বলেন, ‘‘তরুণী মানসিক সমস্যা থেকে এমন আচরণ করছেন। চিকিৎসা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। আমরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। ওই এলাকার মানুষ আজও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। সমাজকর্মী হিসাবে এটা আমাদের ব্যর্থতা।’’

মঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে তরুণীকে নিয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন। মঞ্চের সদস্যদের তাঁরা বলেন, তরুণীর চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। প্রদীপ বলেন, ‘‘পরে আমরা খোঁজ পেয়েছি, তরুণীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাঁকে মছলন্দপুর এলাকায় আর এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’

শুক্রবার বিকেলে যে ওঝা ঝাড়ফুঁকের নামে তরুণীর উপরে অত্যাচার করেছিল, মঞ্চের সদস্যেরা তার বাড়িও যান। সেখানে অবশ্য তালা দেওয়া ছিল। শনিবার মঞ্চের তরফে ঘটনার কথা জানিয়ে ওই ওঝার বিরুদ্ধে আইনানুসারে পদক্ষেপ করতে গাইঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওঝার নাম সুকদেব মণ্ডল। বাড়ি স্থানীয় রামপুর এলাকায়। পেশায় মাংসবিক্রেতা। পুলিশ মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওঝার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। সে পলাতক।’’

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘মহিলার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভোটপর্ব মিটে গেলে গ্রামে সচেতনতামূলক শিবিরও করা হবে।’’ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘এটা কোনও রোগ নয়। হঠাৎ কোনও মানসিক আঘাত থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগে এমন সমস্যা হতে পারে। হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানোই একমাত্র পথ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন