নির্দল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ বনগাঁয়

বোমা- আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নির্দল প্রার্থী, তাঁর এজেন্ট ও কর্মীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ, গোটা ঘটনায় মদত দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী সুফল হালদার। সুফলবাবু যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মারধরে জখম তরুণ বৈরাগী নামে এক জনকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫২
Share:

হামলার প্রতিবাদে বনগাঁ থানার সামনে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

বোমা- আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নির্দল প্রার্থী, তাঁর এজেন্ট ও কর্মীদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ, গোটা ঘটনায় মদত দিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী সুফল হালদার। সুফলবাবু যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মারধরে জখম তরুণ বৈরাগী নামে এক জনকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

গোটা ঘটনায় ওই ওয়ার্ডে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এত কাল নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়ে এসেছে। ডান-বাম দু’পক্ষই সৌহার্দ্য বজায় রেখে ভোটের প্রচার করে থাকে। এ বারই তার ব্যতিক্রম হল।’’ নির্বিঘ্নে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয়ে আছেন ওয়ার্ডের ভোটারদের অনেকে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন মনোতোষ নাথ ওরফে লাল্টু। তিনি বনগাঁর প্রয়াত চেয়ারম্যান পরিতোষ নাথের ছেলে তথা সদ্য প্রাক্তন বনগাঁ শহর তৃণমূলে সাধারণ সম্পাদক। দলের শিক্ষক সংগঠনেরও নেতা ছিলেন তিনি। তাঁর কাকা প্রশান্ত নাথ তৃণমূলের টিকিটে বিধানসভা ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই লাল্টুবাবুর পরিবার তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

ওয়ার্ডের বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক চেয়েছিলেন এ বার লাল্টুবাবুকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু দল টিকিট দেয় কাউন্সিলর সুফলবাবুকেই। সুফলবাবু ২০১০ সালে কংগ্রেসের প্রতীকে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যা ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই ভাল চোখে দেখেননি। ওই কর্মীদের অভিযোগ, ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের তিনি এড়িয়ে চলতেন। উপর মহলের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই তিনি টিকিট পেয়েছেন।

এ দিকে, টিকিট না পেয়ে দলের কিছু কর্মী-সমর্থকের ইচ্ছায় লাল্টুবাবু নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁকে বহিষ্কার করে দল।

কিন্তু তার পরেও ওয়ার্ডে প্রচারে লাল্টুবাবু ভাল সাড়া পাচ্ছেন। যা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মেনে নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ।

রবিবার রাতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ লাল্টুবাবু জানিয়েছেন, শনিবার রাতে কিছু দুষ্কৃতী তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য ও কয়েক জন কর্মীর বাড়িতে হামলা করে। প্রাণনাশের হুমকি দেয়। রবিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পরে বনগাঁ থানায় অভিযোগ করেন শম্ভুবাবু।

অভিযোগ করে ওয়ার্ডে ফেরা মাত্রই দুষ্কৃতীরা শম্ভুবাবু ও কর্মীদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে লাল্টুবাবু ওয়ার্ডে গেলে তাঁকেও দুষ্কতীরা মারধর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। লাল্টু বলেন, ‘‘বাপি মিত্র নামে এক দুষ্কৃতীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। আমাকেও দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছে। সোমবার থেকে যেন ওয়ার্ডে প্রচার না করি, সে জন্য শাসানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এই ঘটনার পিছনে সুফলবাবু-সহ তৃণমূলের কিছু ‘বড় মাথা’ রয়েছে। শম্ভুনাথবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুষ্কতীরা বার বার হুমকি দিচ্ছে। ওরা ভোটে রিগিংয়ের ছক কষছে।’’ সুফলবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গোটাটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত। ভিত্তিহীন অপ্রচার করা হচ্ছে।’’ সুফলবাবুর দাবি, ব্যক্তিগত কোনও কারণে হামলা হয়ে থাকতে পারে।

এ দিকে, ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বাড়ি বাড়ি থেকে বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ লাল্টুবাবুর সমর্থনে এগিয়ে আসেন। রাতেই কর্মীদের নিয়ে লাল্টুবাবু থানায় আসেন। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার এলাকায় প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন