International Mother Language Day

কড়া নিরাপত্তায় ধাক্কা খেল উৎসবের আবেগ

গত দু’বছর করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতির জন্য দু’দেশের মানুষকে সীমানা পেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি নেই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১০
Share:

মহামিলন: নো ম্যানস ল্যান্ডে দুই দেশের মানুষের ভিড়। ছবি: নির্মাল্য প্রামািণক

ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা শীলা দাস চলে এসেছিলেন ভারত-বাংলাদেশ পেট্রাপোল সীমান্তে। ইচ্ছে ছিল, আন্তর্জাতিক ভাষা উৎসবে শামিল হবেন। ওপার বাংলার মানুষের সঙ্গে গল্পগুজব, ভাব বিনিময় হবে। কিন্তু এ দিন নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তিনি দু’দেশের নো ম্যানস ল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। মন খারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরে গেলেন শীলা।

Advertisement

হুগলি থেকে এসেছিলেন বৃদ্ধা নির্মলা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দা ওপার বাংলার মানুষ। তাই ওদেশের উপরে একটা টান রয়ে গিয়েছে। ভাষা দিবসের দিন এখানে মিলন মেলা হয় শুনে এসেছিলাম। এসে ভাল লাগছে। কিন্তু আইনের বড় কড়া শাসন চার দিকে।’’

গত দু’বছর করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতির জন্য দু’দেশের মানুষকে সীমানা পেরোনোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি নেই। ভাষাপ্রেমীরা ভেবেছিলেন, আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে তাঁরা উৎসবে শামিল হতে পারবেন। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকে দু'দেশের মানুষ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে একত্রিত হয়েছিলেন। তবে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তাঁদের বেশিরভাগই নো ম্যানস ল্যান্ডে মিলিত হতে পারেননি।

Advertisement

এ দেশে নো ম্যানস ল্যান্ডের আগে যশোর রোডে গার্ডরেল ফেলে রাস্তা আটকে দিয়েছিল পুলিশ। কড়া পাহারায় ছিল বিএসএফ। উৎসব-অনুষ্ঠানও ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় কম জাঁকজমকপূর্ণ।

এত দিন সীমান্তের ভাষা উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল, দু’দেশের মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়, গল্পগুজব, আলিঙ্গন, একত্রে ছবি তোলা। সে সব ঘাটতি থেকে গেল এ বার।

তবে দু’দেশের অতিথি ও অনুমতিপত্র নিয়ে আসা কিছু মানুষ নো ম্যানস ল্যান্ডে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। মিষ্টি ও ফুলের স্তবক বিনিময় করেন তাঁরা। ভাষা শহিদের বেদিতে শ্রদ্ধা জানান। ছবি তোলেন একত্রে। এ দিন এক সঙ্গে অনুষ্ঠান না হলেও দু’দেশের আলাদা অনুষ্ঠান হয়েছে। নো ম্যানস ল্যান্ডে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন। এ দেশের তরফে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ পুরপ্রধান গোপাল শেঠ, বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁর পুলিশ সুপার জয়িতা বসু, ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ।

এই উৎসবে এ বার প্রথম উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জয়িতা। তিনি বলেন, ‘‘মাতৃভাষার এই উৎসবে শামিল হতে পেরে অনন্য অভিজ্ঞতার স্বাদ পেলাম।’’ বেনাপোল থেকে এসেছিল স্কুল ছাত্রী দোলা। তার কথায়, ‘‘এই প্রথম এখানে এলাম। তবে নো ম্যানস ল্যান্ডে ঢুকতে না পেরে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’ স্বপন বলেন, ‘‘৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এ বার এক সঙ্গে অনুষ্ঠান হওয়াটা কাম্য ছিল। এই উৎসবকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।’’ প্রসেনজিৎ বলেন, ‘‘নো ম্যানস ল্যান্ডে জায়গার অভাব ও নিরাপত্তার কারণে এ বার এক সঙ্গে অনুষ্ঠান করা যায়নি। আগামী বছর নিশ্চয়ই এ নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন