দাবি মেনে মঞ্চ, ভাষা দিবসে মিলল দু’পার

এ বারই প্রথমবার সীমান্তের ভাষা উৎসবে এসেছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি কথা শুরু করতেই বোঝা গেল আবেগ দখল নিয়েছে কণ্ঠের।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

স্মরণে: শহিদ বেদিতে সম্মান। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

মিলেও যেন মিলত না পুরোটা। দু’পারের ভাষা একটাই। কিন্তু দেশ ভিন্ন বলে এত দিন মঞ্চ হত দু’টো। অনুষ্ঠানও তাই।

Advertisement

এ বার আর তা হল না। বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে একুশের ভাষা দিবস পালিত হল নো ম্যানস্ ল্যান্ডের অভিন্ন মঞ্চে। ভাষাই মুছে দিল কাঁটাতারের বেড়া।

বরাবরই দাবি উঠেছে, দু’পারের ভাষা যখন এক, আর সেই ভাষা দিবসেরই অনুষ্ঠান যখন, তখন অনুষ্ঠানও একটাই হওয়া উচিত। এ বার একুশের ভাষা দিবসে তেমনটাই হল। মঞ্চের নামকরণ হয়েছিল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ।’ সেখানেই জড়ো হয়েছিলেন দু’দেশের অসংখ্য ভাষাপ্রেমী। কারও হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, কারওর গালে আঁকা অ-আ-ক-খ।

Advertisement

এ বারই প্রথমবার সীমান্তের ভাষা উৎসবে এসেছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি কথা শুরু করতেই বোঝা গেল আবেগ দখল নিয়েছে কণ্ঠের। বললেন, ‘‘দেশভাগ আজও আমাকে কষ্ট দেয়, যন্ত্রণাবিদ্ধ করে।’’ দু’দেশের মানুষকে এক মঞ্চের সামনে দেখে তিনি বললেন, ‘‘দুই বাংলাই আমার দেশ। দুই বাংলা আমার রক্তে-মজ্জায়-জিনের মধ্যে প্রথীত হয়ে আছে।’’ এসেছিলেন সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। খালি গলায় ‘আমি বাংলায় গান গাই....’ ধরতেই গলা মেলাল জনতা।

এ দিন সকাল থেকে বেনাপোল সীমান্তে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা থেকে আসা সবিতা বিশ্বাস। নিরাপত্তারক্ষীদের অনুরোধ করে সকাল ৯টার পরে অনুমতি পেলেন নো ম্যান্‌স ল্যান্ডে ঢোকার। মুখে এক গাল হাসি। বললেন, ‘‘ঢুকতে না পেরে দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল।’’

এ দিন নো ম্যান্‌স ল্যান্ডে যৌথ মঞ্চের অনুষ্ঠান দেখতে বাংলাদেশের মানুষজন ঢুকতে পেরেছিলেন। তবে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বড় বালাই। তাই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই তাঁদের মঞ্চের একপাশে বসতে দেওয়া হয়। দু’পারের মানুষ একাত্ম হয়ে অনুষ্ঠান দেখেছেন। কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ চলেছে। যৌথ ভাবে শহিদ বেদিতে মালা দেন অতিথিরা। দূরদূরান্ত থেকে বা এই দিনে কাঁটাতার পেরিয়ে আসা কেন? প্রশ্ন শুনে কিছুটা ক্ষিপ্তই হলেন ও পার বাংলার এক প্রবীণ। বললেন ‘‘এটা অনুভূতির টান। হৃদয়ের যোগাযোগ।’’ এ বার পাল্টা প্রশ্ন তাঁর, ‘‘পৃথিবীর আর কোথাও গেলে এমনটা খুঁজে পাবেন কি?’’

এ পার বাংলা থেকে এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের কাছে লিটনের আবেদন, ‘‘আসুন আমরা শপথ নিই, বিনা প্রয়োজনে সজ্ঞানে আমরা যেন অন্য ভাষা ব্যবহার না করি।’’ জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কথায়, ‘‘এই দিনটিকে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে ভাষা উৎসব আমাকে অন্তর থেকে টেনে আনে। দুই বাংলার মানুষের হৃদয় কাঁটাতার দিয়ে যে বেঁধে রাখা যায় না, তা এখানে না এলে বোঝা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন