বাসন্তীতে রক্তপাত 
TMC

TMC: পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল নিয়েই বার বার অশান্তি

সূত্রের খবর, ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের ক্ষমতা কাদের দখলে থাকবে, তা নিয়েই নতুন করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছে।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৬
Share:

শোকার্ত: বাসন্তীতে খুনের ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র।

কয়েক মাস শান্ত থাকার পর ফের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল বাসন্তীতে। গুলিতে মারা গিয়েছেন মনোয়ারা বিবি। জখম আরও দু’জন। শুক্রবার রাতে ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের নেবুখালি সর্দারপাড়ার ঘটনা। নিহত ও জখমেরা যুব তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে দাবি যুবদের। অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূলের অন্য এক গোষ্ঠীর।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ একটি বাইকে করে যুব তৃণমূল কর্মী মঞ্জুর আলম সর্দার ও নুরুল হাসান সর্দার বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির সামনেই আচমকা পথ আটকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী। ইউসুফ সর্দার, ইদ্রিস মোল্লা, মনিরুল শেখ, খালেক সর্দারদের নেতৃত্বে হামলা চলে বলে অভিযোগ। বাইক ভাঙচুর করা হয়। লাঠি, রড দিয়ে মারধর করা হয়।

মঞ্জুরের চিৎকারে ছুটে আসেন তাঁর মা মনোয়ারা। গুলি-বোমা ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মনোয়ারার। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মঞ্জুর ও নুরুল। আশপাশের লোকজন বেরিয়ে এলে গা ঢাকা দেয় হামলাকারীরা। জখম দু’জনকে পাঠানো হয় চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

খবর পেয়ে পুলিশ আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ দেহ আটকে বিক্ষোভ চলে। রাত ২টো নাগাদ পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

শনিবার বিকেলে বাসন্তী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মঞ্জুরের বাবা মোনাব্বার সর্দার। তবে শুক্রবার রাতেই পুলিশ ইউসুফ সর্দার ও ইদ্রিস মোল্লা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের ক্ষমতা কাদের দখলে থাকবে, তা নিয়েই নতুন করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান ইউসুফ মোল্লার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন তৃণমূল বেশ কয়েকজন সদস্য। এই নিয়েই নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বাসন্তীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসে। খুন, জখমের বহু ঘটনা ঘটেছে। মাস কয়েক আগে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়। দুই গোষ্ঠী এক হয়ে পথ চলতে শুরু করে বাসন্তীতে। কিন্তু বিধানসভা ভোট মিটতেই ফের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসে। সম্প্রতি জয়ন্ত নস্করের মৃত্যুর পরে সেই কোন্দল আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন দলের একাংশ।

গত পঞ্চায়েত ভোটে ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেন যুব তৃণমূল অনুগামীরা। নির্বাচনের পরে নির্দল তথা যুব তৃণমূলের সদস্যদের সমর্থনে প্রধান হন ইউসুফ মোল্লা। প্রায় দশ মাস আগে আমির আলি সর্দার নামে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ইউসুফ-সহ বেশ কয়েকজন যুব তৃণমূল নেতার নাম জড়ায়। প্রধান-সহ বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন।

সেই থেকেই কার্যত এই এলাকায় ব্যাকফুটে চলে যান ইউসুফ ও তাঁর অনুগামীরা। জামিন পেয়ে ফিরে এলেও বাসন্তীতে ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল ইউসুফের। তৃণমূল নেতা নুর ইলাহি গাজি ওরফে রাজা এবং তাঁর অনুগামী জাকির শেখের প্রভাব বেড়েছে সেই সুযোগে। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা উপপ্রধান শঙ্কর সর্দারই এখন মূলত চালাচ্ছেন এই পঞ্চায়েত।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তরফে ইউসুফকে ফের প্রধান হিসেবে পঞ্চায়েতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও উপপ্রধান তা হতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এরই মধ্যে ইউসুফের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন তাঁরা।

ইউসুফ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ও আমার অনুগামীদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। শান্ত এলাকাকে অশান্ত করছে রাজা গাজির নেতৃত্বে জাকির শেখ ও তাঁর দলবল। পুলিশকে বার বার জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, শুক্রবার সকালেও আইসিকে তিনি নিজে জানিয়েছিলেন, মঞ্জুর ও নুরুলকে খুনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।

যদিও রাজা বলেন, ‘‘হামলার ঘটনায় রাজনীতির যোগ নেই। এটা তৃণমূলের কোন্দল নয়। পারিবারিক বিবাদের জেরে ঘটনা ঘটেছে।’’ একই বক্তব্য স্থানীয় বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলের।

রাজার দাবি, যাঁরা নিজেদের ‘তৃণমূল’ বলে দাবি করছেন, তাঁরা অনেকে গত বিধানসভা ভোটে কেউ আইএসএফ, কেউ বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনিপ দাস বলেন, ‘‘বাসন্তীতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নতুন কিছু নয়। নিজেদের দোষ ঢাকতে বিজেপির নাম জড়াতে চাইছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন