প্রতীকী ছবি।
নর্দমার দিকে ইঙ্গিত করে জেলার প্রতিনিধিদলের সদস্য জানতে চাইলেন, ‘‘এখানে লার্ভা আছে?’’ বসিরহাট পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ দলের সদস্যেরা সমস্বরে বললেন, ‘‘নাহ্। একটাও নেই!’’ নর্দমা থেকে কিছুটা জল তুলে এনে ওই প্রতিনিধি বললেন, ‘‘তা হলে এগুলো কী? দেখুন, এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা।’’ কিন্তু এর পরে যা ঘটল, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না প্রতিনিধিরা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী ১ জুন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য নিজে বসিরহাট যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনা করতে সম্প্রতি জেলার ২৭টি পুরসভাকে ডেকেছিলেন জেলাশাসক। সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান প্রতিনিধিদলের ওই সদস্য। যা শুনে তাজ্জব সকলে। তিনি জানান, এডিস মশার লার্ভা যে নর্দমায় রয়েছে, সে কথা বলতেই উল্টে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে প্রশ্ন করা হয়, ওটা যে এডিসেরই লার্ভা, তার প্রমাণ কী? এ কথায় যারপরনাই বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যে মানুষ, তারই বা কী প্রমাণ আছে? নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকায় আপনাদের যেমন মানুষ বলে চেনা যায়, এই লার্ভাগুলিরও তেমনই নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যা দেখে বোঝা যায়, সেগুলি এডিস ইজিপ্টাইয়ের।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের এই আচরণই তাদের উদ্বেগে রেখেছে। বসিরহাটের পাশাপাশি দেগঙ্গা এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, হাবড়া, গাইঘাটার নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতেও এডিসের লার্ভা মিলেছে। শহরাঞ্চলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে খড়দহ, পানিহাটি, কামারহাটি, বরাহনগর, ব্যারাকপুর এবং উত্তর ব্যারাকপুরের মতো বি টি রোড সংলগ্ন পুরসভাগুলি। এর মধ্যে খড়দহ ও কামারহাটির উপরে বিশেষ নজর রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেও সংশ্লিষ্ট পুর এলাকাগুলিতে আশানুরূপ ফল মিলছে না। খড়দহের খাল বরাবর এলাকায় কী ভাবে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, তা মানচিত্র করে ওই দিনের বৈঠকে দেখানো হয়েছে। যার দায় সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা পুরসভার কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন বলে খবর।
স্বাস্থ্য ভবন মনে করছে, জেলা আধিকারিকদের এই পর্যবেক্ষণের পিছনে যুক্তি রয়েছে। এক-একটি পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ছয় সদস্যের পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ বাহিনী গড়ার কথা বলেছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু বহু পুরসভা এত দিনেও তা করতে পারেনি। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া পুরসভার সাধারণ কর্মীদের দিয়ে সেই কাজ করানো হচ্ছে। মৎস্য দফতরের তরফে গাপ্পি মাছ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নর্দমার এমনই মজে যাওয়া অবস্থা যে, গাপ্পি মাছ বেশি দূর যেতে পারছে না। যে সমস্ত পুর এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের গড়িমসি লক্ষ করা যাচ্ছে, সেখানেই সমস্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কোথায় কোথায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, তার তালিকা তৈরি হয়েছে। গাইঘাটার একটি রাস্তা অর্ধেক তৈরি হয়ে রয়েছে। সেখানে জল জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একই ভাবে দেগঙ্গার এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি নর্দমার কাজও শেষ হয়নি। সেখানেও এডিসের বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলাশাসক পদমর্যাদার কাউকে যেতে হচ্ছে মানেই তো
বারবার বলেও কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবাদে টাকা তো পাওয়া যাচ্ছে। তা হলে এই হাল কেন? কাউকে কাজটা তো করতে হবে। জেলা প্রশাসন সেটাই করছে।’’ বসিরহাট পুরসভার চেয়ারম্যান
তপন সরকার বলেন, ‘‘১ জুন বসিরহাট, বাদুড়িয়া, টাকি পুরসভাকে নিয়ে বৈঠক করার কথা জেলাশাসকের। আমাদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু সমস্যা আছে। বসিরহাটে ডেঙ্গি সংক্রমণের কোনও খবর নেই। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে কোথাও ঘাটতি থাকলে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মিটিয়ে নেব।’’