জল-জীবনে আত্মবিশ্বাস ফেরাচ্ছে লাইফ জ্যাকেট

কেবল কপালের জোর নয়, বরং এই প্রথমবার লাইফ জ্যাকেট গায়ে থাকায় জলে দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকার জন্য মাঝসমুদ্রে দুর্ঘটনার পরেও পরিবারের কাছে বেঁচে ফিরেছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী বীরঙ্গ দাস।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:৪২
Share:

বল-ভরসা এই জ্যাকেটই। — নিজস্ব চিত্র।

কেবল কপালের জোর নয়, বরং এই প্রথমবার লাইফ জ্যাকেট গায়ে থাকায় জলে দীর্ঘক্ষণ ভেসে থাকার জন্য মাঝসমুদ্রে দুর্ঘটনার পরেও পরিবারের কাছে বেঁচে ফিরেছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী বীরঙ্গ দাস।

Advertisement

মৎস্য দফতর এ বছর থেকেই ট্রলারের বিমার নথি, প্রাণদায়ী টিউব (লাইফ বয়) এবং ভেসে থাকার পোশাক (লাইফ জ্যাকেট) বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের জন্য। ফলে বীরঙ্গের মতো অনেকেরই প্রাণের ঝুঁকি কমতে চলেছে বলাই চলে।

কিছু দিন আগেই জম্বুদ্বীপের কাছে ১৬ জন মৎস্যজীবী নিয়ে উল্টে গিয়েছিল ‘এফবি শিশুবালা’ নামে একটি মাছধরা ট্রলার। কিন্তু বরাতজোরে বেঁচে যান ওই ট্রলারের মৎস্যজীবীরা। তাঁদের বেশিরভাগই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করেছিলেন। ট্রলারের মালিক অক্ষয়নগরের বিধান দাস জানালেন, লাইফ জ্যাকেট ছিল বলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি মৎস্যজীবীকেই এই জ্যাকেট দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

এর আগে ট্রলার ডুবি হলে তেলের জ্যারিকেন নিয়ে ভেসে থাকতে হতো মৎস্যজীবীদের। তাতে সুরক্ষা পুরোপুরি সম্ভব হতো না। প্রাণহানিও ঘটত। কিন্তু এ বার জেলায় চিত্রটা পাল্টাতে শুরু করেছে। এখনও সব মৎস্যজীবী এর আওতায় আসেননি। কারণ, ওই জ্যাকেট মৎস্যজীবীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হলেও প্রথমে জ্যাকেট কোন সংস্থা থেকে কোথায় পাওয়া যাবে, তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলি এই জ্যাকেট কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত কয়েকটি সংস্থা থেকে কিনে এনে মধ্যে বিলি করছে। একটি জ্যাকেটে একজন এবং একটি বয়াতে চারজন ভেসে থাকতে পারেন।

কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বিজন মাইতি বলেন, ‘‘আমরা ৩৮০ টাকা করে এই জ্যাকেট দিচ্ছি। আমাদের সংগঠনের এখনও প্রায় দেড়শো ট্রলার বাকি রয়েছে যাদের লাইফ জ্যাকেট কিনতে হবে। আগের চেয়ে জ্যাকেট ব্যবহারের মাত্রা বাড়ছে।’’ ট্রলার মালিকদের বেশি চিন্তা মৎস্যজীবীদের নিয়েই। কারণ কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে একটা ভয় পেয়ে বসে সকলকেই। তাই ট্রলারের চেয়ে বেশি মূল্যবান, মাঝিমাল্লাদের আত্মবিশ্বাস। তাই সংগঠন‌গুলিও এই নিরাপত্তার মধ্যে আনতে চাইছে মৎস্যজীবীদের।

তবে এখনও অনেক মৎস্যজীবী এই নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে রয়ে গিয়েছেন। সাউথ সুন্দরবন মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা মোজাম খান বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনে প্রায় ১২০০ মৎস্যজীবী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন এখন লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করছেন। আমরা জোর দিয়েছি, যাতে গভীর সমুদ্রে যাওয়া সকলের জন্যই মালিকেরা এই জ্যাকেট কেনেন।’’

মৎস্য দফতরের কর্তারা দাবি করছেন, বেশি দিন এই নিয়ম ফাঁকি দিয়ে থাকার উপায় নেই। কারণ, মাছ ধরার লাইসেন্স বাৎসরিক নবীকরণ করতে এলেই তাকে লাইফ জ্যাকেট কেনার রসিদ দেখাতে হবে। লাইফ বয়ার ক্ষেত্রেও তাই। সারা বছর ধরে চলে এই লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ।

ডায়মন্ড হারবার সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎকুমার বাগ বলেন, ‘‘এ বছর থেকে সমস্ত মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নৌকোয় কাজ করা মৎস্যজীবীদের জন্য বা ট্রলারের বিমার নথি, লাইফ বয়া এবং লাইফ জ্যাকেট কেনার রসিদ না দেখালে আমরা ট্রলারের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করছি না।’’ বিশেষ করে ৬ সিলিন্ডারওয়ালা যে সমস্ত বড় ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাবে, তাদের ক্ষেত্রে এটা লাগবেই।

তবে দাঁড় টানা কিছু নৌকো এবং ২ সিলিন্ডার ট্রলারগুলির ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট এখনও তা অতটা কড়াকড়ির জায়গায় যায়নি। বড় ট্রলারের ক্ষেত্রে যেমন নৌকোয় থাকা প্রতিটি মৎস্যজীবীর জন্যই এই জ্যাকেট কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ছোট ট্রলারগুলির ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি বজায় রাখতে চান মৎস্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, মৎস্যজীবীদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে দেওয়া আটকানো হবে। ট্রলার মালিকদের বাধ্য করা হবে এগুলি করে ফেলতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন