লোক আদালতে কয়েক ঘণ্টায় মিটে গেল জমে থাকা বহু মামলা

দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন স্বামী, তারপর থেকে একটা টাকাও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। পরিবার দ্বারস্থ হয়েছিল লোক আদালতের। চাষের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন কৃষক। ঋণ শোধ তো দূরের কথা, সুদের বোঝা চেপে বসেছিল সেই কৃষকের ঘাড়ে। দীর্ঘদিন চলছিল বিচার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০১:১৬
Share:

দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন স্বামী, তারপর থেকে একটা টাকাও ক্ষতিপূরণ মেলেনি। পরিবার দ্বারস্থ হয়েছিল লোক আদালতের।

Advertisement

চাষের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন কৃষক। ঋণ শোধ তো দূরের কথা, সুদের বোঝা চেপে বসেছিল সেই কৃষকের ঘাড়ে। দীর্ঘদিন চলছিল বিচার।

বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে যে সব মামলা, তেমনই বেশ কিছু মামলার এক দিনেই নিষ্পত্তি হল লোক আদালতে। ক্ষতিপূরণ পেলেন স্ত্রী। সুদের বোঝাই শুধু নয়, ঋণেরও অনেকটা ছাড় মিলল কৃষকের।

Advertisement

শনিবার বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আদালত-সহ বিধাননগর, ব্যারাকপুর, বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমা লোক আদালতে মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ১২৮৩টি মামলার। আদায় হয়েছে ২ কোটি ৯২ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে বারাসত জেলা লোক আদালতেই নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৯০টি মামলার। মামলাগুলির বেশির ভাগই ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ-সংক্রান্ত। চাষবাস, দোকান, ঘর তৈরি কিংবা ব্যবসার জন্য ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পরে নানা জটিলতায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অনেকে। পথ দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত ১৮টি মামলাতেও ক্ষতিপূরণ মিলেছে ৪৫ লক্ষ টাকা। যা পাওয়ার জন্য এত দিন বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মৃতের পরিবার-পরিজনকে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা বিচারক হিসাবে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ সামন্ত। শনিবার বারাসতে লোক আদালত শুরু হওয়ার আগে বিচারপ্রার্থীদের তিনি জানান, ঋণ নেওয়ার পরে কেউ যদি মনে করেন মামলা চলতেই থাকবে, সুরাহা হবে না, তা হলে ভুল করবেন। টাকা না দিয়ে মামলা দিনের পর দিন চালিয়ে নেওয়া যাবে, তা-ও ভাবা ঠিক নয়। লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আর অন্য আদালতে আপিল করাও যাবে না। সুতরাং দু’পক্ষেরই যাতে সুবিধা হয়, কেউ বিপদে না পড়েন, সে জন্যই লোক আদালত। ঋণ শোধ না করলে প্রথমে ডিক্রি জারি, তারপর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে জানান জেলা বিচারক।

এরপরেই বারাসত লোক আদালতে পরপর মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি হতে থাকে। ওই আদালতের পাশাপাশি বিধাননগর, ব্যারাকপুর, বনগাঁ, বসিরহাট মহকুমা আদালতেও বেশ কিছু মামলার নিষ্পত্তি হয়। বারাসতের পরে সব থেকে বেশি মামলার নিষ্পত্তি হয় বসিরহাট লোক আদালতে। সেখানে ৯৩টি মামলা থেকে ৪২ লক্ষ টাকা আদায় হয়। জেলা দায়রা বিচারক তথা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্যই এই লোক আদালত। সেখানে মামলা করলে বিচারপ্রার্থীরা যাতে যথাযথ বিচার পান, সেটা আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি মামলাগুলি যাতে পড়ে না থেকে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে।’’ ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী লোক আদালত বসবে বলে জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে সন্তুষ্ট। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘আদালতের কাজ এত তাড়াতাড়ি মিটতে পারে, ভাবতে পারিনি।

উত্তর ২৪ পরগনা

মামলা নিষ্পত্তি -১২৮৩

টাকা আদায় -২ কোটি ৯২ লক্ষ ৩৬ হাজার

বারাসত জেলা আদালত

মামলা নিষ্পত্তি -১০৯০টি

টাকা আদায় -২ কোটি ২৫ লক্ষ ৬৬ হাজার।

বিধাননগর মহকুমা আদালত

মামলা নিষ্পত্তি -২৩টি

আদায় -৩ লক্ষ ২০ হাজার

ব্যারাকপুর মহকুমা আদালত

মামলা নিষ্পত্তি -৫৮টি।

আদায় -৩ লক্ষ ৮৬ হাজার।

বনগাঁ মহকুমা আদালত

মামলা নিষ্পত্তি -১৯টি

আদায় -১৭ লক্ষ ৬৪ হাজার।

বসিরহাট মহকুমা আদালত

মামলা নিষ্পত্তি -৯৩টি।

আদায় -৪২ লক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন